আমার
নাম কেঞ্জি ।
কথাটা
ইংরেজিতে বলতে গিয়ে আমার মাথায় ভাবনা আসে, আমরা জাপানিজরা একই জিনিস এত ভিন্নভাবে
বলি কেন ? শক্তসামর্থ, গাট্টাগোটা মানুষ হলে গুরুগম্ভীর ভাবে বলতাম , “ হুম , আমিই
কেঞ্জি । ” ভদ্র স্বভাবের হলে, “ জ্বী , আমিই কেঞ্জি । পরিচিত হয়ে খুশি হলাম । ”
স্বাভাবিকভাবে বললে , “ আমি কেঞ্জি ।”আর গে কিংবা সমকামিদের মত কেউ হয়ে থাকলে চোখ টিপ দিয়ে বলতাম , “ হ্যাঁ
সোনা, কেঞ্জি আমারই নাম ! ”
“ ওহ , তুমিই কেঞ্জি ! ”
স্থূল
শরীরের আমেরিকান ট্যুরিস্টটা আমাকে দেখে বাড়াবাড়ি রকমের খুশি হল । “ আপনার সাথে
পরিচিত হয়ে খুশি হলাম ” বলতে বলতে তার
সাথে হ্যান্ডশেক করলাম । জায়গাটা ছিল সেইবু শিনযুকু স্টেশনের কাছে একটা হোটেলে ,
যেটাকে বাইরের দেশে সর্বোচ্চ আড়াই স্টার মার্কা হোটেল বলা চলে । ফ্রাঙ্ককে প্রথম দেখার মুহুর্তটি আমি কখনোই ভুলব না ।
আমার
বয়স তখন মাত্র ২০ এবং তখন আমার ইংরেজি বলার দক্ষতা নিখুঁতের ধারেকাছেও ছিল না । তা
সত্বেও আমি বিদেশি ট্যুরিস্টদের ‘রাত্রিভ্রমণের গাইড’ হিসেবে কাজ করা শুরু
করেছিলাম । সোজা কথায় বললে, আমি তাদের সেক্স ট্যুরগুলোর তত্ত্বাবধানে থাকি , তাই
আমার ইংরেজি নিখুঁত না হলেও চলে । এইডস পরিচিতি লাভ করার পর জাপানিজ সেক্স
ইন্ডাস্ট্রি ঠিক বিদেশিদের গলায় জড়িয়ে আর আহবান জানাচ্ছেনা । সত্যি বলতে কী,
অধিকাংশ ক্লাবই আজকাল ‘গাইজিন[1]
’ দের সোজাসুজি সার্ভিস দেয়াই বন্ধ করে দিয়েছে । তারপরেও বিদেশিরা দৃঢ়সংকল্প নিয়ে
এসেছে, যে তারা খেলেই ছাড়বে ! তারাই আমাকে ভাড়া করে , যাতে আমি তাদেরকে অপেক্ষাকৃত
নিরাপদ রেস্তোরা, ম্যাসাজ পার্লার , এস এম বার আর সোপল্যান্ড এর মত জায়গাতে গাইড
করে নিয়ে যাই ।
আমি
কোনো কোম্পানির হয়ে কাজ করিনা,
অফিসও নেই আমার । তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র একটা ইংরেজি ট্যুরিস্ট
গাইডে ছোটখাটো বিজ্ঞাপন দিয়ে যে পরিমান কামাই, তা দিয়ে
মেগুরো তে একটা সুন্দর স্টুডিও এপার্টমেন্ট[2] ভাড়া নিয়েছি । মাঝেমধ্যেই আমার বান্ধবিকে কোরিয়ান বারবিকিউ খাওয়াতে
নিয়ে যাই, নিজের ইচ্ছেমত গান শুনি, নিজের ইচ্ছেমত বই পড়ি ।
অবশ্য
আমার এটা বলে রাখা উচিত যে, আমার
মা, যিনি কিনা শিযুয়োকা জেলায় একটা ছোট্ট কাপড়ের দোকান
চালান, জানেন যে আমি একটা কলেজ প্রিপারেশন কোর্সে ভর্তি
হয়ে পড়াশোনা করছি । আমার যখন ১৪ বছর বয়েস, তখন আমার বাবা
মারা যান । তারপর থেকে মা ই আমাকে বড় করে তুলেছেন । হাইস্কুলে আমার অনেক বন্ধুবান্ধব
ছিল, যারা নিজের মায়ের ওপর
হাত তুলতেও দ্বিধাবোধ করত না । সেরকম আমি নই, মাকে
বিন্দুমাত্র কষ্ট দেবার ইচ্ছে আমার নেই । যদিও মা শুনলে কষ্ট পাবে যে, কলেজে যাবার আমার বিন্দুমাত্র পরিকল্পনা নেই । প্রফেশনাল ডিগ্রি নেবার
মত আমার বিজ্ঞান ও অংকে দক্ষতা নেই। আর আর্টস ডিগ্রিতে সর্বোচ্চ একটা ঘুপচি
কিউবিকলে বসে থাকার চাকরি পাব , যা করার আমার কোনো শখ নেই
। আমার একটা স্বপ্ন ছিল এবং সেটা এখন আমার সাধ্যের
নাগালে, টাকা জমলেই একদিন আমি আমেরিকা চলে যাব ।
“ এটা
কি কেঞ্জি ট্যুর বলছেন ? আমি ফ্রাঙ্ক ,
আমেরিকা থেকে আগত একজন ট্যুরিস্ট । ”
প্রশ্নবোধক সুরেই তিনি ফোনে প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করেছিলেন ।
গত
২৯ ডিসেম্বর সকালবেলার দিকে যখন ফোন বাজছিল, আমি
তখন পত্রিকা হাইস্কুলের মেয়ের খুনের ব্যাপারে একটা কলামে চোখ বুলাচ্ছিলাম ।
পত্রিকা অনুযায়ী, লাশটাকে নাকি শিনযুকুর কাবুকিচো[3]
এলাকার নির্জন একটা গলির ময়লা ফেলার জায়গাতে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল , তাও আবার
হাত,পা, মাথা কেটে আলাদা করে । ভিক্টিম ছিল একদল হাইস্কুলের মেয়েদের গ্রুপের,
যাদের কিনা আশেপাশের লাভ হোটেলে প্রায়ই দেখা মিলত । কোনো সাক্ষী এগিয়ে আসেনি,
তদন্ত কর্মকর্তারাও কোনো শক্ত লিড খুঁজে পাচ্ছেনা । কিন্তু এই ঘটনার মাধ্যমে
আজকালকার টিনএজারদের মধ্যে একটা ধারনা পোক্ত হওয়া উচিত যে, ‘টাকার বিনিময়ে ভালবাসা
’ শব্দটার মধ্যে কত ভয়ঙ্কর একটা জগত
লুকিয়ে আছে । আর ভিক্টিমের গ্রুপের মেয়েরা সরাসরি স্বীকার করেছে যে, তারা আড়ালে
দেহ ব্যবসাই চালাচ্ছিল ।
[3] টোকিওর খারাপ পল্লি বা অন্ধকার জগতের কর্মকান্ডের এলাকা । বলা হয়ে থাকে,টোকিওতে যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন কেবল মাত্র
কাবুকিচো’তে রাতের সূর্যের উদয় হয়।সবরকমের ক্রাইম , মাফিয়া সর্দার, ড্রাগস,
মেয়েমানুষ ইত্যাদি সকল অন্ধকার জগতে হদিশ এখানে পাওয়া যায় ।
No comments:
Post a Comment