Thursday 7 March 2019

In the Miso soup-1

                                                  






আমার নাম কেঞ্জি

কথাটা ইংরেজিতে বলতে গিয়ে আমার মাথায় ভাবনা আসে, আমরা জাপানিজরা একই জিনিস এত ভিন্নভাবে বলি কেন ? শক্তসামর্থ, গাট্টাগোটা মানুষ হলে গুরুগম্ভীর ভাবে বলতাম , “ হুম , আমিই কেঞ্জি । ” ভদ্র স্বভাবের হলে, “ জ্বী , আমিই কেঞ্জি পরিচিত হয়ে খুশি হলাম ।  ” স্বাভাবিকভাবে বললে , “ আমি কেঞ্জি ।”আর গে কিংবা সমকামিদের মত কেউ হয়ে থাকলে চোখ টিপ দিয়ে বলতাম , “ হ্যাঁ সোনা, কেঞ্জি আমারই নাম !  ”

 ওহ , তুমিই কেঞ্জি ! ”
স্থূল শরীরের আমেরিকান ট্যুরিস্টটা আমাকে দেখে বাড়াবাড়ি রকমের খুশি হল । “ আপনার সাথে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম  ” বলতে বলতে তার সাথে হ্যান্ডশেক করলাম । জায়গাটা ছিল সেইবু শিনযুকু স্টেশনের কাছে একটা হোটেলে , যেটাকে বাইরের দেশে সর্বোচ্চ আড়াই স্টার মার্কা হোটেল বলা চলে । ফ্রাঙ্ককে  প্রথম দেখার মুহুর্তটি আমি কখনোই ভুলব না ।

আমার বয়স তখন মাত্র ২০ এবং তখন আমার ইংরেজি বলার দক্ষতা নিখুঁতের ধারেকাছেও ছিল না । তা সত্বেও আমি বিদেশি ট্যুরিস্টদের ‘রাত্রিভ্রমণের গাইড’ হিসেবে কাজ করা শুরু করেছিলাম । সোজা কথায় বললে, আমি তাদের সেক্স ট্যুরগুলোর তত্ত্বাবধানে থাকি , তাই আমার ইংরেজি নিখুঁত না হলেও চলে । এইডস পরিচিতি লাভ করার পর জাপানিজ সেক্স ইন্ডাস্ট্রি ঠিক বিদেশিদের গলায় জড়িয়ে আর আহবান জানাচ্ছেনা । সত্যি বলতে কী, অধিকাংশ ক্লাবই আজকাল ‘গাইজিন[1] ’ দের সোজাসুজি সার্ভিস দেয়াই বন্ধ করে দিয়েছে । তারপরেও বিদেশিরা দৃঢ়সংকল্প নিয়ে এসেছে, যে তারা খেলেই ছাড়বে ! তারাই আমাকে ভাড়া করে , যাতে আমি তাদেরকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ রেস্তোরা, ম্যাসাজ পার্লার , এস এম বার আর সোপল্যান্ড এর মত জায়গাতে গাইড করে নিয়ে যাই ।

আমি কোনো কোম্পানির হয়ে কাজ করিনা, অফিসও নেই আমার । তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র একটা ইংরেজি ট্যুরিস্ট গাইডে ছোটখাটো বিজ্ঞাপন দিয়ে যে পরিমান কামাই, তা দিয়ে মেগুরো তে একটা সুন্দর স্টুডিও এপার্টমেন্ট[2] ভাড়া নিয়েছি । মাঝেমধ্যেই আমার বান্ধবিকে কোরিয়ান বারবিকিউ খাওয়াতে নিয়ে যাই, নিজের ইচ্ছেমত গান শুনি, নিজের ইচ্ছেমত বই পড়ি ।


অবশ্য আমার এটা বলে রাখা উচিত যে, আমার মা, যিনি কিনা শিযুয়োকা জেলায় একটা ছোট্ট কাপড়ের দোকান চালান, জানেন যে আমি একটা কলেজ প্রিপারেশন কোর্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছি । আমার যখন ১৪ বছর বয়েস, তখন আমার বাবা মারা যান তারপর থেকে মা ই আমাকে বড় করে তুলেছেন । হাইস্কুলে আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ছিল, যারা নিজের মায়ের ওপর হাত তুলতেও দ্বিধাবোধ করত না । সেরকম আমি নই, মাকে বিন্দুমাত্র কষ্ট দেবার ইচ্ছে আমার নেই । যদিও মা শুনলে কষ্ট পাবে যে, কলেজে যাবার আমার বিন্দুমাত্র পরিকল্পনা নেই । প্রফেশনাল ডিগ্রি নেবার মত আমার বিজ্ঞান ও অংকে দক্ষতা নেই। আর আর্টস ডিগ্রিতে সর্বোচ্চ একটা ঘুপচি কিউবিকলে বসে থাকার চাকরি পাব , যা করার আমার কোনো শখ নেই । আমার একটা স্বপ্ন ছিল এবং সেটা এখন আমার সাধ্যের নাগালে, টাকা জমলেই একদিন আমি আমেরিকা চলে যাব ।


“ এটা কি কেঞ্জি ট্যুর  বলছেন ? আমি ফ্রাঙ্ক , আমেরিকা থেকে আগত একজন ট্যুরিস্ট ।  ” প্রশ্নবোধক সুরেই তিনি ফোনে প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করেছিলেন ।
গত ২৯ ডিসেম্বর সকালবেলার দিকে যখন ফোন বাজছিল, আমি তখন পত্রিকা হাইস্কুলের মেয়ের খুনের ব্যাপারে একটা কলামে চোখ বুলাচ্ছিলাম । পত্রিকা অনুযায়ী, লাশটাকে নাকি শিনযুকুর কাবুকিচো[3] এলাকার নির্জন একটা গলির ময়লা ফেলার জায়গাতে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল , তাও আবার হাত,পা, মাথা কেটে আলাদা করে ভিক্টিম ছিল একদল হাইস্কুলের মেয়েদের গ্রুপের, যাদের কিনা আশেপাশের লাভ হোটেলে প্রায়ই দেখা মিলত । কোনো সাক্ষী এগিয়ে আসেনি, তদন্ত কর্মকর্তারাও কোনো শক্ত লিড খুঁজে পাচ্ছেনা । কিন্তু এই ঘটনার মাধ্যমে আজকালকার টিনএজারদের মধ্যে একটা ধারনা পোক্ত হওয়া উচিত যে, ‘টাকার বিনিময়ে ভালবাসা ’  শব্দটার মধ্যে কত ভয়ঙ্কর একটা জগত লুকিয়ে আছে । আর ভিক্টিমের গ্রুপের মেয়েরা সরাসরি স্বীকার করেছে যে, তারা আড়ালে দেহ ব্যবসাই চালাচ্ছিল



[1] বিদেশিদের জাপানিজরা ‘গাইজিন’ সম্বোধন করে থাকে
[2] এক রুমের মধ্যে সব থাকে , এমন ডিজাইন ওয়ালা বাসা
[3] টোকিওর খারাপ পল্লি বা অন্ধকার জগতের কর্মকান্ডের এলাকা বলা হয়ে থাকে,টোকিওতে যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন কেবল মাত্র কাবুকিচো’তে রাতের সূর্যের উদয় হয়।সবরকমের ক্রাইম , মাফিয়া সর্দার, ড্রাগস, মেয়েমানুষ ইত্যাদি সকল অন্ধকার জগতে হদিশ এখানে পাওয়া যায় ।



(আজকে প্রথম অনুবাদ শুরু করলাম অফিশিয়ালি , তাই ছোট আকার হয়ে গেল । আশা করি আস্তে আস্তে বড় বড় চাপ্টার , ভিন্ন ভিন্ন বই অনুবাদ শুরু করতে পারব)






No comments:

Post a Comment

আরো যা দেখতে পারেন