Monday 8 April 2019

Salvation of a saint-2






২.

মাশিবা দম্পত্তি যখন সিঁড়ি বেয়ে নামছিল, তখন তাদের দেখেই কেমন একটা সন্দেহ হল হিরোমি ওয়াকাইয়ামা এর । তাদের হাসি হাসি মুখ , বিশেষ করে আয়ানে এর হাসি মুখটা যে জোর করে করা, তা বোঝাই যাচ্ছে ।



“ এতক্ষন অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত ।  ” ইয়োশিতাকা সিঁড়ি থেকে নেমেই বলল । “ তুমি কি ইউকিকো দম্পত্তিদের কাছ থেকে কিছু শুনেছ ? 


“ ইউকিকো একটা মেসেজ রেখে গিয়েছে যে, তারা পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এসে পড়বে এখানে । ” হিরোমি তাকে জানালো ।


“ তাহলে ত আমাকে এক্ষুনি শ্যাম্পেন টা জোগাড় করে রাখতে হয় ! ”


“ আমিই করছি সেটা ।    আয়ানে হড়বড় করে বলে উঠল আচমকা । “ হিরোমি , তুমি গ্লাসগুলো আনতে পারবে ? 


“ অবশ্যই । 


  তাহলে আমি টেবিলটা ঠিক করছি   ”, ইয়োশিতাকা জানালো ।


দেখতে না দেখতেই আয়ানে দ্রুত কিচেনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো , তা আবার হিরোমি ডাইনিং রুমে পৌঁছানোর আগেই । ডাইনিং রুমের দেয়ালের কাপবোর্ড  তার উদ্দেশ্য । কাপবোর্ডটা অ্যান্টিক/ এন্টিক ছিল , দাম প্রায় তিন মিলিয়ন ইয়েনের আশেপাশে । কাপবোর্ডের ভেতরের গ্লাসগুলোও সেরকম দামী ছিল ।



খুব সাবধানে সে কাপবোর্ড থেকে পাঁচটা শ্যাম্পেন গ্লাস বের করল – দুটো ‘ব্যাকারাট’*  আর তিনটে ‘ভেনেশিয়ান’* স্টাইলের গ্লাস মাশিবা দম্পত্তিদের সংসারে অতিথিদের ভেনেশিয়ান ন্সটাইলের গ্লাসে শ্যাম্পেন খাওয়ানোই রীতি ।


ইয়োশিতাকা তখন আটজনের ডাইনিং টেবিলকে পাঁচজনের বসার জন্য সাজাচ্ছে । সে এসব কাজে বেশ পটু, আর হিরোমি তার কাজ দেখতে দেখতেই শিখে ফেলেছে কাজগুলো ।


হিরোমি আস্তে আস্তে শ্যাম্পেন গ্লাসগুলো তার জায়গামত রাখছিলো । রান্নাঘর থেকে পানি পড়ার শব্দ ভেসে এল । কাজ করতে করতে সে ইয়শিতাকার কাছাকাছি এসে পড়ল ।



“ আপনি কি উনাকে কিছু বলেছেন ?  ” ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল হিরোমি ।


“ না, তেমন কিছুই ত বলিনি ।  ” মাথা না তুলেই ব্যস্ত অবস্থাতেই উত্তর দিল ইয়োশিতাকা ।


“ মানে... কথা ত হয়েছে ? ”


এবার তার দিকে তাকালো ইয়োশিতাকা , “ কী নিয়ে ? ”


সে যখনই বলতে যাবে ‘কী নিয়ে ?!?!’  , তক্ষুনি কলিং বেলটা বেজে উঠল ।


ইয়োশিতাকা কিচেনের উদ্যেশ্যে একটু উঁচু গলায় বলে উঠল , “ ওরা এসে গেছে । 


“ দুঃখিত , আমার হাতটা কাজে ব্যস্ত । তুমি একটু দরজাটা খুলে দিবে ? ” আয়ানের গলা ভেসে এলো রান্নাঘর থেকে ।



“ অবশ্যই ” , ইয়োশিতাকা উত্তর দিল । দেয়ালে লাগানো ইন্টারকম টা তুলে নিলো সে ।





দশ মিনিট পর ।

মাশিবা দম্পত্তি আর তাদের অতিথিরা ডাইনিং টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছিল । সকলেরই হাসিমুখ ছিল ; কিন্তু হিরোমির কাছে মনে হল সকলের হাসিই মেকি মেকি – যেন ক্যাজুয়াল পরিবেশটা বজায় রাখতে সবাই দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । কত কষ্ট করেই না এ ব্যাপারগুলো শিখতে হয় , হিরোমি মনে মনে ভাবল । জন্ম থেকে ত আর এসব শিখে আসা যায়না । আয়ানের যে প্রায় একবছরের মত লেগেছে এসব শিখতে, তা হিরোমির অজানা ছিলনা ।



“ বরাবরের মতই আপনার রান্না চমৎকার হয়েছে , আয়ানে !  ” মুখভর্তি মাছ নিয়ে চাবাতে চাবাতে প্রশংসা করল ইউকিকো ইকাই । “ মাছের ম্যারিনেট করা যে এতটা শৈল্পিকভাবে করা সম্ভব , তা অনেকেই জানেনা ।  ” ডাইনিং টেবিলে ইউকিকোর ভূমিকাই ছিল প্রত্যেকটা খাবারের প্রশংসা করা ।



“ তুমি ত মুগ্ধ হবেই  ” পাশে থেকে তার স্বামী বলে উঠল । “ অথচ  নিজে ত সবসময় ঠিকই ইন্সট্যান্ট সস কিনে ব্যবহার কর !   



“ মাঝেমধ্যে কিন্তু আমিও বানাই সস ।  


“ বোধহয় ঐ আওজিসো সস*  গুলো । ঐ যে পুদিনার সসের মত । 


“ তাতে কী হ্যা !? ওটাও ত স্বাদ লাগে খেতে । 


“ আমারো কিন্তু আওজিসো সস পছন্দ  ” , আয়ানে যোগ দিলো তাদের কথাবার্তায় ।


“ দেখেছ ?  তাছাড়া যেটা আমি বানাই, ওটা স্বাস্থ্যকরও বটে । 


“ প্লিয আয়ানে, ওকে আর তাল দিবেন না ।  ” মুখ গোমড়া করে তাতসুহিকো ( ইউকিকোর স্বামী ) বলল । “ পরে দেখা যাবে , আমার স্টেক এর টুকরাতেও সে ওসব যা-তা সস ঢালছে ! 


“ শুনেই ত আমার আগ্রহ বেড়ে গেল ।  ” ইউকিকো উত্তেজিত গলায় বলল , “ পরবর্তীতে তাহলে এটাই বানাচ্ছি তোমার জন্য ! 


তাতসুহিকো বাদে ডাইনিং টেবিলের সবাই হেসে উঠল ।



তাতসুহিকো পেশায় একজন উকিল । অনেক কোম্পানি বা ব্যবসাতেই সে আইনগত পরামর্শ দিয়ে থাকে, এমনকি মাশিবা দের ও । সে মাশিবা'দের কোম্পানির ম্যানেজমেন্টে ভালোবাসেই জায়গা করে নিয়েছে । সে আর ইয়োশিতাকা দুজনেই কলেজ থেকে বন্ধু ।



তাতসুহিকো ফিজ থেকে একবোতল ওয়াইন বের করে হিরোমিকে জিজ্ঞেস করল , তার গ্লাসে কিছুটা ঢেলে দিবে কিনা ।


গ্লাসের ওপর হাত রেখে হিরোমি মানা করলো ,“ না না ঠিক আছে, আমার আর লাগবেনা । ধন্যবাদ আপনাকে ।  


“ তাই ? আমি ত জানতাম তোমার সাদা ওয়াইন পছন্দ । 


“ হ্যাঁ , পছন্দ করি , কিন্তু বেশি খাওয়া হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই । আবারো ধন্যবাদ আপনাকে । 


তাতসুহিকো একটু নিরাশ হলো ব্যাপারটাতে । সে ইয়োশিতাকার গ্লাসে ঢেলে দিল ওয়াইন ।


“ তোমার কি শরীর খারাপ না ত আবার ?  ” আয়ানে উদ্বিগ্ন ভাবে জিজ্ঞেস করল হিরোমি’কে ।


“ না না আমি সুস্থ আছি । আসলে হয়েছে কি , কদিন ধরে বাইরে বেশ পান করা হয়ে যাচ্ছে , তাই আপাতত নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখছি ।  



“ আহ ! যদি আবার তোমার বয়সে ফিরে যেতে পারতাম , তাহলে চুটিয়ে পার্টি  করতাম ! 


তাতসুহিকো আয়ানের গ্লাসটা পরিপূর্ন করে দিয়ে আড়চোখে তার স্ত্রীর দিকে তাকালো । এবার বোতলটা দিয়ে নিজের গ্লাসে ঢালতে ঢালতে বলল , “ ইউকিকো কদিন ধরে এলকোহল পান করা বন্ধ রেখেছে, তাই আমিই একলা বসে বসে ড্রিংক করি আজকাল  । ”


ইয়োশিতাকা নিজের হাতের চামচটা তুলে তার দিকে ধরে বলল , “ ঠিকই বলেছ । ওর ত এখন এসব বন্ধ করাটাই উচিত , তাইনা ? ”


“ যদি সে দুইজনের পরিমানে খাওয়া শুরু করে, তবেই সেরেছে । ” তাতসুহিকো হাতের গ্লাসের ওয়াইনটা নাড়াতে নাড়াতে বলল । “ কারন সে যাবে , সবই তার বুকের দুধে গিয়ে হাজির হবে ! 



“ কদিন পরে তুমি আবার এলকোহল পান করতে পারবে ?  ” ইয়োশিতাকা তাকে জিজ্ঞেস করল ।


“ ডাক্তার বলল , প্রায় একবছর অপেক্ষা করতে হবে । 


“ উহু , ডাক্তার বলেছে প্রায় দেড় বছর অপেক্ষা করতে ।  ” তার স্বামী জানালো । “ দুইবছর করলেও ক্ষতি নেই । আর যদি এতটা অপেক্ষা করতেই হয় , তবে সেটা একেবারে  ছেড়ে দেয়াই যুক্তিযুক্ত । 



“ ওহ ! তাহলে আমি বাচ্চার খেয়াল রাখবো , আর একই সাথে পান করাও ছেড়ে দিবো ? কোনোভাবেই সম্ভব না । অবশ্য তুমি যদি আমাদের সোনামনি রাজপুত্রটার খেয়াল রাখতে রাজি হও , তবে সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে । 


“ আচ্ছা বাপু , ঠিক আছে ।  ” তার স্বামী পরাজিত হবার ভঙ্গী করল । “ কিন্তু কমপক্ষে একবছর অপেক্ষা করবে , আর পরে শুরু করলে সামলে চলবে পরিমানটা , ঠিক আছে ? 


ইউকিকো তার দিকে কিছুটা কপট চোখে তাকিয়ে পরক্ষনেই হেসে ফেলল । তার ভাবভঙ্গীতে বোঝা গেল ,এসব নাটকীয়তা তার খুব পছন্দ ।


দুমাস আগেই ইউকিকো এর বাচ্চা হয়েছে । তাদের সংসারের প্রথম বাচ্চা সেটা , যার জন্য তাদের অনেক বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে । তাতসুহিকোর বয়স ৪২ , আর ইউকিকোর ৩৫ তারা তাদের প্রেগনেন্সীটাকে ব্যাখা দিয়েছিল সর্বশেষ ওভারে ছক্কা পেটানোর মত ! *


“ আজকে তাহলে তোমাদের বাবু কোথায় ? তোমাদের মা বাবা খেয়াল রাখছেন নাকি তার ?  ” ইয়োশিতাকা জিজ্ঞেস করল ।


“ হ্যাঁ  ” , তাতসুহিকো মাথা নাড়ল । “ তারা আমাদের বলে দিয়েছে , যতক্ষন চাই ততক্ষন বাইরে থাকতে পারব । তারা নাকি বাচ্চাটার খেয়াল রাখতে অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছে ! আসলেই, বাসার কাছে বাবা-মা থাকলে অনেক সময়ই এসব সুবিধা পাওয়া যায় ।  ”।


“ তবে, সত্যি বলতে কী , আমি মাঝেমধ্যে সেটা নিয়ে চিন্তা করি ।  ” ইউকিকো স্বীকার করল । “ তোমার মা বাচ্চাটাকে খুব বেশি আদর করে একেবারে আহ্লাদি বানিয়ে ফেলছে । আমার এক বান্ধবী বলেছে , বাচ্চাদের আথে সাথে কোলে না নিয়ে কিছুক্ষন পর নিতে । 



ইউকিকোর হাতের গ্লাসটা খালি দেখে হিরোমি উঠে পড়লো সিট থেকে , “ আমি আপনাকে পানি এনে দিচ্ছি । 


“ফ্রিজে একবোতল মিনারেল পানি আছে , পুরো বোতলটাই নিয়ে এসো ।   ” আয়ানে তাকে বলে দিলো ।


হিরোমি রান্নাঘরে গিয়ে ফ্রিজটা খুলল । বিশাল আকারের ফ্রিজ, সেটা আবার মাঝখান দিয়ে খোলা যায় ( মানে দুইদিকে দুটো দরজা , বামে ও ডানে  ) *  একপাশের দরজায় মিনারেল পানির বোতল দিয়ে ভরা । সেখান থেকে একটা তুলে নিয়ে হিরোমি ডাইনিং টেবিলে ফিরে এলো । তার চোখ যখন আয়ানের উপর পড়লো , আয়ানে ঠোঁটটা আলতো নাড়িয়ে তাকে ধন্যবাদ জানালো ।


ইয়োশিতাকা ঐদিকে বলেই চলেছে, “ বাচ্চাকাচ্চা নিশ্চয়ই জীবনটা পুরোপুরি পালটে দেয় , তাইনা ? ”


“ তা ত বটেই । তখন বাচ্চাকে ঘিরেই জীবনটা এগোতে থাকে ।  ” তাতসুহিকো উত্তর দিলো ।


“ সেটা আগেই বুঝেছি । কিন্তু এই যে , হঠাৎ সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল, সেটা কি তোমার কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে ? শুনেছিলাম , বাচ্চাকাচ্চা হলে নাকি দায়িত্ব বেড়ে যায় । তোমার কি মতামত এ ব্যাপারে ? তোমার কি মনে হয়  তোমাকে আরো বেশি খাটতে হচ্ছে ‘বাবা’ হবার পর ?  


“ সত্যি বলতে কি, হ্যাঁ সেটা হচ্ছে । 


আয়ানে ওদিকে সবার গ্লাসে গ্লাসে পানি ঢেলে দিচ্ছে , মুখে তখনো তার সেই মেকি হাসিটা লেগে আছে ।


কথা বলতে বলতে হঠাৎ তাতসুহিকো বলে উঠল , “ প্রসংগ যখন উঠল, তখন একটা কথা বলেই ফেলি । তোমাদের বিয়ের কদ্দিন হলো , এক বছরের বেশি নিশ্চয়ই ? তা এখনো তোমাদের দেখে মনে হয় , সদ্য বিয়ে করেছ তোমরা ! এরকম ভাব আর কতদিন থাকবে হ্যাঁ ?  


“ অ্যাই !    ইউকিকো তার স্বামীর হাতে চাটি মেরে বললো, “ কী সব যা তা বলছো ! ওটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবেনা । ওটা ওদের ব্যাপার । 


“ আচ্ছা আচ্ছা।  ” জোর করে হেসে তাতসুহিকো সামাল দিল তার স্ত্রীকে । “ সবার জীবন সবার কাছে ।  ” বাকি ওয়াইনটা সে গিলে ফেলল । এরপর হিরোমির দিকে তাকিয়ে বলল, “ যাও কথা দিলাম , এরকম আর উদ্ভট কথাবার্তা বলবো না । সে প্রসঙ্গ বাদ । তা তোমার স্কুলের কী অবস্থা ? সবকিছু ভালোভাবে চলছে ? 


“ এখন পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক চলছে । তবে প্রতিদিনই নতুন নতুন জিনিস শিখছি । 


“ তাই স্বভাবিক , তুমি ভালো একটা শিক্ষক পেয়েছো !  ” ইউকিকো বলে উঠল । এরপর আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো , “ তাহলে সবকিছু কি আজকাল হিরোমির উপরেই ছেড়ে দিচ্ছ ?  


আয়ানে মাথা নাড়লো , “ ওকে আর শেখানোর কিছু বাকি নেই আমার । 


“ বাহ ! চমৎকার !  ” ইউকিকো হিরোমির দিকে মুগ্ধভাবে তাকিয়ে বললো ।




অনুবাদকের নোট--

*ছক্কা পেটানোর কথা বলেছি, কারন বইয়ে বেসবল খেলার একটা রেফারেন্স ছিল -- নবম ইনিংসে এসে হোম বেস জয় করা । আর বেসবল খেলার নিয়ম সম্পর্কে অনেকে খুব বেশি জানেনা , তাই এটি ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত লেগেছে । 


*আওজিজো সস -- রান্নাতে ব্যবহৃত সস । কেনাও যায় , আবার ঘরে বসেও বানানো যায় । 



 * ডাবল সাইড ফ্রিজ -- এটা অনেকেই চিনবেন , তাও সুবিধার জন্য দিচ্ছি -- 


No comments:

Post a Comment

আরো যা দেখতে পারেন