“ হাই, ফ্রাংক ।” হাতের পত্রিকাটা টেবিলে ফেলে ফোনটা ভালমত ধরে বললাম । “কেমন
চলছে ভ্রমন ? ”
“ ভালই চলছে । আপনার বিজ্ঞাপনটা একটা ম্যাগাজিনে দেখার পর ভাবলাম , আপনাকে ভাড়া করলে আপনি আমাকে আশপাশ ঘুরিয়ে দেখাতে পারবেন । ”
“কোন ম্যাগজিন? টোকিয়ো পিঙ্ক গাইড নিশ্চয়ই ?”
“আশ্চর্য, আপনি কিভাবে বুঝলেন ?"
“আসলে কেবল ওটাতেই আমি
বিজ্ঞাপন দিই। ”
-“ওহহো, তাই বলুন ! তাহলে
, আমি কি আপনাকে আজ থেকে শুরু
করে তিন রাতের জন্য ভাড়া করতে পারি ?”
“ আপনি কি একলা এসেছেন , নাকি সাথে একটা গ্রুপ
আছে ?”
“ আমি একলাই । সেটাতে কি
কোনো সমস্যা হবে ? ”
“ না , সমস্যা নয় , বরং
আমার ফি টা একজন মানুষের জন্য একটু ব্যয়বহুল – ১০০০০ ইয়েন
, সন্ধ্যা ছটা থেকে রাত নয়টা ; ২০০০০ ইয়েন
, রাত নটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এবং মধ্যরাতের পর ঘন্টাপ্রতি আমি ১০০০০
ইয়েন করে চার্জ করি । কোনোপ্রকার ট্যাক্স নেই , কিন্তু আপনি আমার সকল
ধরনের খরচ , খাবার এবং ড্রিংক্স এর ব্যয়ভার বহন্ করবেন । ”
“ সেটা ঠিক আছে । তাহলে যদি
আপনি রাজি থাকেন, আমি
আপনার নটা থেকে মধ্যরাত এর কোর্সটা বেছে নিলাম , আগামী তিনদিনের জন্য । ”
তিন রাত, ফলে
নিউ ইয়ারস ইভ* এর মধ্যে পড়ে যাচ্ছিল
– এবং তার ফলে আমার একটা ছোট্ট সমস্যা দেখা দিয়েছিল । আমার গার্লফ্রেন্ড , জুন— জানিয়ে রাখি, হাইস্কুলের একটা
মেয়ে ( যে কিনা আমার কাজের বিরোধী ! ) সে
আমাকে দিয়ে ওয়াদা করিয়েছিল যে , আমি অন্তত ঐ রাতটা তার সাথে কাটাবো
। সে ব্যাপারটা একেবারেই পছন্দ করেনি , কারন সে আমাকে আগেরদিনই একেবারে কঠিন প্রতিজ্ঞা করিয়েছিল আমাকে দিয়ে,
যাতে নিউ ইয়ারের কাউন্ট ডাউনের সময় আমরা একসাথে থাকতে পারি । জুন রেগে
গেলে তার মন ভাঙ্গানো বেশ কঠিন কাজ , কিন্তু আমার কাজটা দরকার ছিল । দুবছর ধরে
এ কাজে লেগে আছি , তবুও যত টাকা জমা হবার কথা ছিল , তা হয়নি । তাই ফ্রাঙ্ক কে আমি হ্যাঁ জানিয়ে দিয়েছিলাম কাজের ব্যাপারে ; নিজেকে বুঝ দিচ্ছিলাম এই বলে যে, আমি রাতে
কাউন্টডাউন শুরু হবার কিছুক্ষন আগেই কোনো অযুহাত দিয়ে কেটে পড়ব ।
“ তাহলে আমি আপনার হোটেলে নটার দশমিনিট আগেই উপস্থিত হব
। ”
- - - - - - - - - - - - - - -
- - - - - -
--------------------------------------------------------------------------
ফ্রাংক এক বোতল বিয়ারে চুমুক দিতে দিতে হোটেলের লবির পাশের
ক্যাফেটেরিয়াতে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল । সে নিজের চেহারার বর্ননা দিতে গিয়ে
বলেছিল , সে সাদাটে , আর দেখতে অনেকটা এড হ্যারিস* এর মত , এবং সে নাকি একটা
নেকটাই পড়ে থাকবে , যার মধ্যে সাদা বকের ছোপ থাকবে । অতকিছু খুজতে হয়নি , কারন সেই
ওখানকার একমাত্র বিদেশি খদ্দের ছিল, যার ফলে খুঁজে পেতে বিশেষ বেগ হয়নি । তবে তার
চেহারার সাথে এড হ্যারিস এর মিল খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি আমি , কারন কোনো দিক
থেকেই তাকে তা মনে হচ্ছিলনা ।
“ তাহলে আমরা এখন থেকেই শুরু করতে পারি ? ” সে জিজ্ঞেস করল
।
“ সম্পূর্নটাই তোমার উপর, ফ্রাঙ্ক । কিন্তু আগে যদি তোমার কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে , এখন সেগুলো বলে
ফেলার সবচেয়ে ভাল সময় । কারন ম্যাগাজিন থেকে
তুমি টোকিওর ‘রাত্রিজগত’ এর সম্পর্কে কোনো ধারনাই পাবেনা । ”
“ শুনে বেশ ভাল লাগল ।
”
“ কোনটা ? ”
“ এই যে, ‘টোকিওর রাত্রিজগত’ --- শব্দটাই কেমন যেন উত্তেজনা
জাগায় , তাইনা ? ”
ফ্রাঙ্ককে দেখে আমার কোনোভাবেই মনে হয়নি সে একজন
এস্ট্রোনাট* কিংবা সৈনিক – যেসব চরিত্রে এড হ্যারিস অভিনয় করে আরকি । বরং তাকে
সাধারন স্টকব্রোকার বা ওই টাইপের কিছু মনে হয়েছে । তারমানে এই না যে, আমি
স্টকব্রোকাররা কেমন দেখতে, তাদের আচার-আচরন
– তা জানি । বরং, আমি বোঝাতে
চেয়েছিলাম , তাকে আমার সাদামাটা এবং
বিশেষত্বহীন মনে হয়েছিল ।
“ তোমার বয়স কত , কেঞ্জি ? ”
“ বিশ । ”
“ তাই ? আমিও তাই ধরেছিলাম । কিন্তু আমি শুনেছিলাম ,
জাপানিজদের বয়স বোঝা ভার । ”
শহর থেকে ডিস্কাউন্টে পেয়ে আমি দুটো স্যুট কিনেছিলাম , এবং
ওগুলোর যেকোনো একটা পরেই আমি কাজে চলে আসতাম । শীতের সময় , মানে এখনকার মত, আমার
একটা ওভারকোট আর মাফলার লাগত । চুলের দৈর্ঘ্য স্বাভাবিক ছিল , চুলে কোনোধরনের রঙ
ব্যবহার করতাম না , এমনকি শরীরের কোথাও ছিদ্রও করাইনি – যা কিনা এই জগতে
অস্বাভাবিক ছিল । ক্লাবগুলো অবশ্য আবার অই ধরনের অস্বাভাবিক চেহারার মানুষগুলোর
ব্যাপারে সতর্ক থাকে ।
“ আর আপনি, ফ্রাংক ? আপনার বয়স.....? ”
“ পয়ত্রিশ চলছে । ”
বলে সে একটু মুচকি হাসল ।
তখনই তার মুখের একটা বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ল । খুবই সাদামাটা
একটা চেহারা , কিন্তু অদ্ভূত ব্যাপার , তার চেহারা দেখে তার বয়স বোঝার সাধ্য নেই ।
একবার মনে হবে তার বয়স বিশের ঘরে, পরমুহূর্তেই সেটা মনে মনে কেটে দিয়ে বয়স্টাকে
চল্লিশ বা পঞ্চাশের ঘরে ফেলতে মন চাবে । এখন পর্যন্ত প্রায় দু’শর মত ট্যুরিস্টদের
সাথে কাজ করেছি,অধিকাংশই আমেরিকান ছিল – কিন্তু কখনই এরকম চেহারার কাউকে দেখিনি ।
বেশ কিছুক্ষন পরে কারনটা আমি ধরতে পারলাম । সেটা হল তার
চামড়া , বিশেষ করে মুখের চামড়া । সেটাকে দেখে অনেকটা কৃত্তিম বলে মনে হচ্ছিল, যেন
মুখটা কোনো একসময় পুড়ে গিয়েছিল এবং ডাক্তাররা সেটাকে প্রায় আসলের মত দেখতে কোনো
উপাদান দিয়ে আবার গড়ে দিয়েছে । কি কারনে জানিনা, আমার মনে সেই আর্টিকেলটার কথা মনে
পড়লো, যেটাতে খুন হওয়া স্কুলের মেয়েটার খবর ছিল ।
কফিতে আবার চুমুক দিলাম । “ কবে জাপান এসেছেন আপনি ? ”
গত পরশু, ফ্রাঙ্ক জানালো । সে তখন খুব ধীরে ধীরে বিয়ারের গ্লাসটা
খালি করছিলো । প্রথমে সে আলতো করে গ্লাসটা মুখ পর্যন্ত এনে সেটার ফোমগুলোর দিকে
একদৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সেটা থেকে এক চুমুক নিচ্ছিল এবং মুখভঙ্গি এমন
করছিল যেন, কোনো বিস্বাদ ওষুধ খাচ্ছে সে । আচার আচরন দেখে মনে হল , মহা এক
কঞ্জুসের / কৃপণের পাল্লায় পড়েছি আমি । সাথে সাথে আমার ‘টোকিয়োর গাইড’ বুকের একটা
প্যারাগ্রাফ/অনুচ্ছেদের কথা মনে পড়ে গেল । গাইড বুকটা অধিকাংশ আমেরিকান
ট্যুরিস্টরাই ব্যবহার করত ।
সেটাতে লেখা ছিল – “কখনোই কোনো হোটেলের রেস্তোরায় খাবেন
না । আশেপাশে তাকালেই চারদিকে অনেক ফাস্ট
ফুডের দোকান পাবেন , সেখান থেকেই পারলে দুয়েকটা বার্গার খেয়ে নিবেন । যদি কারো
সাথে দেখা করতে কোনো হোটেলের রেস্টুরেস্টে যেতেই হয় , তবে সেখানে একটা দুটা বিয়ার
খেতে খেতে সময় পার করবেন । কফির গলাকাটা দামের জন্য ওটা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল । কিন্তু
আপনার যদি খুবই ইচ্ছে করে জাপানের গলাকাটা দামের সাথে পরিচিত হবার জন্য; তাদের আর
কিছু লাগবেনা, বরং যেকোনো হোটেল এর রেস্টুরেন্টে গিয়ে কেবল এক গ্লাস ফ্রেশ কমলার
জুস অর্ডার দিয়ে বসে পড়বেন । গ্লাসের কুলার/ছোট ফ্রিজ থেকে আপনাকে যে জ্যুস আপনাকে
খেতে দিবে , তাতে সাক্ষাৎ আপনার কাছ থেকে কমপক্ষে আট কিংবা পনেরো ডলার কেটে রেখে
দিবে । জয়তু, জাপানিজ গভর্মেন্টের ট্যাক্স সিস্টেম !
“ আপনি কি এদেশে কোনো কাজে এসেছেন ? ”
“ তা ত অবশ্যই । ”
“সেটা কি....ভালমত চলছে ? ”
“ আমি ত বলি, ভালই হচ্ছে । আমি দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া থেকে
টয়োটা গাড়ির রেডিয়েটর আমদানি করি । সেটারই চূড়ান্ত লাইসেন্স এর চুক্তি করতে আমি এ
দেশে এসেছি । ইতিমধ্যেই কয়েকটা ইমেইলের আদান-প্রদান করে কাজটা একদিনে খতম করে ফেলেছি
আমরা , কাজেই আর কি বলব ! নিখুঁতভাবেই শেষ
হয়েছে সব কাজ । ”
অনুবাদকের কথা--
* নিউ ইয়ারস ইভ -- নতুন বছর শুরু হবার আগের দিন সন্ধ্যা ।
* এড হ্যারিস - আমেরিকান এক্টর, যদি সিনেমা বা সিরিয়ালের জগতে পা দেয়া থাকে আপনার নিশ্চিত চিনবেন উনাকে ! যদি না চেনা থাকে , তবে সাজেশন থাকবে-- দ্য ট্রুম্যান শো , ওয়েস্টওয়ার্ল্ড সিরিজ দেখার !
অনুবাদকের কথা--
* নিউ ইয়ারস ইভ -- নতুন বছর শুরু হবার আগের দিন সন্ধ্যা ।
* এড হ্যারিস - আমেরিকান এক্টর, যদি সিনেমা বা সিরিয়ালের জগতে পা দেয়া থাকে আপনার নিশ্চিত চিনবেন উনাকে ! যদি না চেনা থাকে , তবে সাজেশন থাকবে-- দ্য ট্রুম্যান শো , ওয়েস্টওয়ার্ল্ড সিরিজ দেখার !
* এস্ট্রোনাট -- নভোচারী , যারা মহাশুন্যে বা স্পেস স্টেশনে কাজ করেন ।
No comments:
Post a Comment