Saturday 9 March 2019

In the Miso soup-2



 হাই, ফ্রাংক   হাতের পত্রিকাটা টেবিলে ফেলে ফোনটা ভালমত ধরে বললাম । “কেমন  চলছে ভ্রমন ? ”

 ভালই চলছে  আপনার  বিজ্ঞাপনটা একটা ম্যাগাজিনে দেখার পর ভাবলাম , আপনাকে ভাড়া করলে আপনি আমাকে আশপাশ ঘুরিয়ে দেখাতে পারবেন  

“কোন ম্যাগজিন? টোকিয়ো পিঙ্ক গাইড নিশ্চয়ই ?”

“আশ্চর্য, আপনি কিভাবে বুঝলেন ?"

“আসলে কেবল ওটাতেই আমি বিজ্ঞাপন দিই। ”

-“ওহহো, তাই বলুন ! তাহলেআমি কি আপনাকে আজ থেকে শুরু করে তিন রাতের জন্য ভাড়া করতে পারি ?”

আপনি কি একলা এসেছেন , নাকি সাথে একটা গ্রুপ আছে ?”

আমি একলাই সেটাতে কি কোনো সমস্যা হবে ? ”

না , সমস্যা নয় , বরং আমার ফি টা একজন মানুষের জন্য একটু ব্যয়বহুল১০০০০ ইয়েন , সন্ধ্যা ছটা থেকে রাত নয়টা ; ২০০০০ ইয়েন , রাত নটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এবং মধ্যরাতের পর ঘন্টাপ্রতি আমি ১০০০০ ইয়েন করে চার্জ করি কোনোপ্রকার ট্যাক্স নেই , কিন্তু আপনি আমার সকল ধরনের খরচ , খাবার এবং ড্রিংক্স এর ব্যয়ভার বহন্ করবেন 

সেটা ঠিক আছে তাহলে যদি আপনি রাজি থাকেনআমি আপনার নটা থেকে মধ্যরাত এর কোর্সটা বেছে নিলাম  , আগামী তিনদিনের জন্য

তিন রাতফলে নিউ ইয়ারস ইভ*  এর মধ্যে পড়ে যাচ্ছিলএবং তার ফলে আমার একটা ছোট্ট সমস্যা দেখা দিয়েছিল আমার গার্লফ্রেন্ড , জুনজানিয়ে রাখি, হাইস্কুলের একটা মেয়ে ( যে কিনা আমার কাজের বিরোধী ! ) সে আমাকে দিয়ে ওয়াদা করিয়েছিল যে , আমি অন্তত ঐ রাতটা তার সাথে কাটাবো সে ব্যাপারটা একেবারেই পছন্দ করেনি , কারন সে আমাকে আগেরদিনই একেবারে কঠিন প্রতিজ্ঞা করিয়েছিল আমাকে দিয়ে, যাতে নিউ ইয়ারের কাউন্ট ডাউনের সময় আমরা একসাথে থাকতে পারি জুন রেগে গেলে তার মন ভাঙ্গানো বেশ কঠিন কাজ , কিন্তু আমার কাজটা দরকার ছিল দুবছর ধরে এ কাজে লেগে আছি , তবুও যত টাকা জমা  হবার কথা ছিল , তা হয়নি তাই ফ্রাঙ্ক কে আমি হ্যাঁ জানিয়ে দিয়েছিলাম কাজের ব্যাপারে ; নিজেকে বুঝ দিচ্ছিলাম এই বলে যে, আমি রাতে কাউন্টডাউন শুরু হবার কিছুক্ষন আগেই কোনো অযুহাত দিয়ে কেটে পড়ব ।  


“ তাহলে আমি আপনার হোটেলে নটার দশমিনিট আগেই উপস্থিত হব ।  ”

- - - - - - - - - - - - - - - -  - - - - -                       --------------------------------------------------------------------------
ফ্রাংক এক বোতল বিয়ারে চুমুক দিতে দিতে হোটেলের লবির পাশের ক্যাফেটেরিয়াতে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল । সে নিজের চেহারার বর্ননা দিতে গিয়ে বলেছিল , সে সাদাটে , আর দেখতে অনেকটা এড হ্যারিস* এর মত , এবং সে নাকি একটা নেকটাই পড়ে থাকবে , যার মধ্যে সাদা বকের ছোপ থাকবে । অতকিছু খুজতে হয়নি , কারন সেই ওখানকার একমাত্র বিদেশি খদ্দের ছিল, যার ফলে খুঁজে পেতে বিশেষ বেগ হয়নি । তবে তার চেহারার সাথে এড হ্যারিস এর মিল খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি আমি , কারন কোনো দিক থেকেই তাকে তা মনে হচ্ছিলনা ।

“ তাহলে আমরা এখন থেকেই শুরু করতে পারি ? ” সে জিজ্ঞেস করল ।

“ সম্পূর্নটাই তোমার উপর, ফ্রাঙ্ক । কিন্তু আগে  যদি তোমার কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে , এখন সেগুলো বলে ফেলার সবচেয়ে ভাল সময় । কারন ম্যাগাজিন থেকে  তুমি টোকিওর ‘রাত্রিজগত’ এর সম্পর্কে কোনো ধারনাই পাবেনা । ”

“ শুনে বেশ ভাল লাগল ।  ”

“ কোনটা ? ”

“ এই যে, ‘টোকিওর রাত্রিজগত’ --- শব্দটাই কেমন যেন উত্তেজনা জাগায় , তাইনা ?  ”


ফ্রাঙ্ককে দেখে আমার কোনোভাবেই মনে হয়নি সে একজন এস্ট্রোনাট* কিংবা সৈনিক – যেসব চরিত্রে এড হ্যারিস অভিনয় করে আরকি । বরং তাকে সাধারন স্টকব্রোকার বা ওই টাইপের কিছু মনে হয়েছে । তারমানে এই না যে, আমি স্টকব্রোকাররা কেমন দেখতে, তাদের আচার-আচরন  – তা জানি । বরং,  আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম , তাকে আমার  সাদামাটা এবং বিশেষত্বহীন মনে হয়েছিল ।

“ তোমার বয়স কত , কেঞ্জি ? ”

“ বিশ । ”

“ তাই ? আমিও তাই ধরেছিলাম । কিন্তু আমি শুনেছিলাম , জাপানিজদের বয়স বোঝা ভার ।  ”


শহর থেকে ডিস্কাউন্টে পেয়ে আমি দুটো স্যুট কিনেছিলাম , এবং ওগুলোর যেকোনো একটা পরেই আমি কাজে চলে আসতাম । শীতের সময় , মানে এখনকার মত, আমার একটা ওভারকোট আর মাফলার লাগত । চুলের দৈর্ঘ্য স্বাভাবিক ছিল , চুলে কোনোধরনের রঙ ব্যবহার করতাম না , এমনকি শরীরের কোথাও ছিদ্রও করাইনি – যা কিনা এই জগতে অস্বাভাবিক ছিল । ক্লাবগুলো অবশ্য আবার অই ধরনের অস্বাভাবিক চেহারার মানুষগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকে ।

“ আর আপনি, ফ্রাংক ? আপনার বয়স.....? ”

“ পয়ত্রিশ চলছে ।  ” বলে সে একটু মুচকি হাসল ।


তখনই তার মুখের একটা বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ল । খুবই সাদামাটা একটা চেহারা , কিন্তু অদ্ভূত ব্যাপার , তার চেহারা দেখে তার বয়স বোঝার সাধ্য নেই । একবার মনে হবে তার বয়স বিশের ঘরে, পরমুহূর্তেই সেটা মনে মনে কেটে দিয়ে বয়স্টাকে চল্লিশ বা পঞ্চাশের ঘরে ফেলতে মন চাবে । এখন পর্যন্ত প্রায় দু’শর মত ট্যুরিস্টদের সাথে কাজ করেছি,অধিকাংশই আমেরিকান ছিল – কিন্তু কখনই এরকম চেহারার কাউকে দেখিনি ।

বেশ কিছুক্ষন পরে কারনটা আমি ধরতে পারলাম । সেটা হল তার চামড়া , বিশেষ করে মুখের চামড়া । সেটাকে দেখে অনেকটা কৃত্তিম বলে মনে হচ্ছিল, যেন মুখটা কোনো একসময় পুড়ে গিয়েছিল এবং ডাক্তাররা সেটাকে প্রায় আসলের মত দেখতে কোনো উপাদান দিয়ে আবার গড়ে দিয়েছে । কি কারনে জানিনা, আমার মনে সেই আর্টিকেলটার কথা মনে পড়লো, যেটাতে খুন হওয়া স্কুলের মেয়েটার খবর ছিল ।

কফিতে আবার চুমুক দিলাম । “ কবে জাপান এসেছেন আপনি ? ”

গত পরশু, ফ্রাঙ্ক জানালো । সে তখন খুব ধীরে ধীরে বিয়ারের গ্লাসটা খালি করছিলো । প্রথমে সে আলতো করে গ্লাসটা মুখ পর্যন্ত এনে সেটার ফোমগুলোর দিকে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সেটা থেকে এক চুমুক নিচ্ছিল এবং মুখভঙ্গি এমন করছিল যেন, কোনো বিস্বাদ ওষুধ খাচ্ছে সে । আচার আচরন দেখে মনে হল , মহা এক কঞ্জুসের / কৃপণের পাল্লায় পড়েছি আমি । সাথে সাথে আমার ‘টোকিয়োর গাইড’ বুকের একটা প্যারাগ্রাফ/অনুচ্ছেদের কথা মনে পড়ে গেল । গাইড বুকটা অধিকাংশ আমেরিকান ট্যুরিস্টরাই ব্যবহার করত ।

সেটাতে লেখা ছিল – “কখনোই কোনো হোটেলের রেস্তোরায় খাবেন না । আশেপাশে তাকালেই চারদিকে অনেক  ফাস্ট ফুডের দোকান পাবেন , সেখান থেকেই পারলে দুয়েকটা বার্গার খেয়ে নিবেন । যদি কারো সাথে দেখা করতে কোনো হোটেলের রেস্টুরেস্টে যেতেই হয় , তবে সেখানে একটা দুটা বিয়ার খেতে খেতে সময় পার করবেন । কফির গলাকাটা দামের জন্য ওটা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল । কিন্তু আপনার যদি খুবই ইচ্ছে করে জাপানের গলাকাটা দামের সাথে পরিচিত হবার জন্য; তাদের আর কিছু লাগবেনা, বরং যেকোনো হোটেল এর রেস্টুরেন্টে গিয়ে কেবল এক গ্লাস ফ্রেশ কমলার জুস অর্ডার দিয়ে বসে পড়বেন । গ্লাসের কুলার/ছোট ফ্রিজ থেকে আপনাকে যে জ্যুস আপনাকে খেতে দিবে , তাতে সাক্ষাৎ আপনার কাছ থেকে কমপক্ষে আট কিংবা পনেরো ডলার কেটে রেখে দিবে । জয়তু, জাপানিজ গভর্মেন্টের ট্যাক্স সিস্টেম !


“ আপনি কি এদেশে  কোনো কাজে এসেছেন ?  ”

“ তা ত অবশ্যই ।  ”

“সেটা কি....ভালমত চলছে ? ”


“ আমি ত বলি, ভালই হচ্ছে । আমি দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া থেকে টয়োটা গাড়ির রেডিয়েটর আমদানি করি । সেটারই চূড়ান্ত লাইসেন্স এর চুক্তি করতে আমি এ দেশে এসেছি । ইতিমধ্যেই কয়েকটা ইমেইলের আদান-প্রদান করে কাজটা একদিনে খতম করে ফেলেছি আমরা  , কাজেই আর কি বলব ! নিখুঁতভাবেই শেষ হয়েছে সব কাজ । ” 





অনুবাদকের কথা--

* নিউ ইয়ারস ইভ -- নতুন বছর শুরু হবার আগের দিন সন্ধ্যা । 

* এড হ্যারিস - আমেরিকান এক্টর, যদি সিনেমা বা সিরিয়ালের জগতে পা দেয়া থাকে আপনার নিশ্চিত চিনবেন উনাকে ! যদি না চেনা থাকে , তবে সাজেশন থাকবে-- দ্য ট্রুম্যান শো , ওয়েস্টওয়ার্ল্ড সিরিজ দেখার ! 


* এস্ট্রোনাট -- নভোচারী , যারা মহাশুন্যে বা স্পেস স্টেশনে কাজ করেন । 




No comments:

Post a Comment

আরো যা দেখতে পারেন