ভূমিকা
আচমকা কিয়োমি নাগাশিমার চোখের সামনে থেকে সবকিছু অদৃশ্য হয়ে গেল।
আসলে কি যে ঘটেছে, তা সম্পর্কে তার কোনো ধারনাই ছিল না। এক
মুহূর্ত আগেও তিনি প্রত্যেকদিন যেসব বাড়িকে পাশ কাটিয়ে যেতেন, সেগুলো তার গাড়ির উইন্ডশিল্ডে প্রতিফলিত
হচ্ছিল। আর
একটু সামনেই যে রাস্তা ঢালু হয়ে নিচে নেমে গিয়েছে, সেটাও তার অপরিচিত ছিল না। রাস্তাটা ডান দিকে একটু সরে গিয়েছে, সেখানে
একটা ট্রাফিক লাইট রয়েছে। চোখের সামনে থেকে সবকিছু অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগে তিনি দেখতে পেলেন, ট্রাফিক লাইটটা
মাত্র হলুদ রঙে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে।
কিয়োমি চোখের পলক ফেলার চেষ্টা করলেন, কিন্তু
কিছুতেই তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে এল
না। অনেকক্ষন ধরে চেষ্টা করলেন,
কিন্তু চেষ্টাটা বৃথা গেল। তার চোখের সামনে থেকে সবকিছু হারিয়ে গিয়েছে
: তার সামনে চলমান সাদা রঙের সেডান, বাস স্টপেজে
দাঁড়িয়ে থাকা বাসের পেছনের টেললাইট,
ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়া একদল হাইস্কুলের মেয়ে—সবকিছু। কিয়োমি বিভ্রান্তিতে পড়ে তার স্টিয়ারিং হুইলের দিকে তাকালেন।
তখন তিনি সত্যিকারের ভয় পাওয়া শুরু করলেন। স্টিয়ারিং হুইলটা উধাও হয়ে গিয়েছে। সত্যি বলতে কী, তার হাত দুটোও যে কোথায় সেটাও তার জানা ছিল না। তার কোমড়ে বেঁধে রাখা সিটবেল্টটা, এমনকি গ্যাস প্যাডেল এ রাখা পা-কোনোটাই তিনি আর টের পাচ্ছেন না। যেখানে যেটা থাকার কথা,
সেখানে কোনোকিছুই তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। চারদিকে কেবল অন্ধকার একটা শূন্যতা। অসীম দিগন্ত
পর্যন্ত তা
চারদিকে মিলিয়ে গিয়েছে।
তার মনে হতে লাগলো, তিনি একটা উষ্ণ, আঠালো একটা তরলে ভাসছেন,
তাও আবার অনাবৃত অবস্থায়। কীভাবে যেন তার অজান্তেই তার কাপড়চোপড়গুলো
উধাও হয়ে গিয়েছে।
ঐ স্বপ্নটা আবার শুরু হয়েছে।
স্বপ্নটা প্রতিবছর ক্রিসমাসের সময় তিনি দেখেন। স্বপ্নে প্রত্যেকবার তিনি
নিজেকে একটা ঘন মিশকালো জগতে আবিষ্কার করেন-যার আদি নেই, অন্ত নেই। অনেকদিন আগে থেকেই এই
অদ্ভুত স্বপ্নটা তিনি দেখে আসছেন। এটাই সেই স্বপ্নটা, আর তিনি এবার তার মধ্যে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু এখন কেন এই স্বপ্নটা
তিনি দেখছেন? এই প্রশ্নটার উত্তর তার জানা ছিল না। নক্ষত্রের সুনির্দিষ্ট গতিবিধির
মতই স্বপ্নটা কেবল একটা নির্দিষ্ট সময়েই তার জীবনে দেখা দিত। ক্রিসমাস বাদে আর কোনো সময়ে তিনি
স্বপ্নটা দেখেননি, জেগে থাকা অবস্থায় সেটা দেখার প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে?
তার শরীরে ধীরে ধীরে একটা পরিবর্তন দেখা দিচ্ছিল। আস্তে আস্তে তার হাত ও
পা অবশ হতে শুরু করলো। মনে হচ্ছিল, সে দুটো সত্যি সত্যি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। মাথা, কোমড়-
কোনোকিছুই নেই আর। নিজেকে তার একটা বড়সড় কেঁচোর মত মনে হতে লাগলো। কিয়োমি ঐ শরীর দিয়েই সরসর
করে ঐ ঘন, থকথকে জগতের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলেন।
এই জায়গাটা কোথায়? ইতোমধ্যে এই প্রশ্নটা তার মনে বেশ কয়েকবার এসেছে। তার শরীরের কাছে এ জায়গাটা
চেনা বলে মনে হচ্ছে, অথচ কিয়োমি হাজার চেষ্টা করেও জায়গাটা সম্পর্কে
কিচ্ছু মনে করতে পারলেন না। হয়ত একসময়, দূরের কোনো জায়গায় কিয়োমি ঠিক এরকমই অবস্থার
সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখনো কি হচ্ছিল বুঝতে পারেননি, কেবল এভাবে নড়াচড়া
করে, সাঁতার কেটে কেবল এগিয়েই গিয়েছিলেন। অন্তত এটুকু সত্য। কবেকার ঘটনা সেটা? গতকাল?
গতবছর? নাকি আরো অনেক আগের? তিনি বলতে পারছিলেন না। আসলে সেই ধূসর, প্রাণহীন, বিষন্ন জগতটাতে
আদৌ সময়ের অস্তিত্ব আছে কি?
কিয়োমি আবার টের পেলেন, তার শরীরে আবার
কিছু একটা পরিবর্তন হচ্ছে। দেহের একেবারে ভেতরে ছোটোখাটো কিছু একটা ধীরে ধীরে দু’ভাগ হয়ে গেল। ঠিক ঐ মুহূর্তেই তিনি
টের পেলেন, তার দেহের একেবারে কেন্দ্র সংকুচিত হওয়া শুরু করেছে। আর দেহের একেবারে শেষ
প্রান্তবিন্দুগুলো নিঃশব্দে বিপরীত দিকে প্রবাহিত হওয়া শুরু করেছে(!)
তিনি দুভাগে বিভাজিত হচ্ছেন।
অদ্ভুত ব্যাপার, কেমন জানি শান্তিবোধ হচ্ছে তার। সময় কি সুন্দরভাবে, ধীরে প্রবাহিত
হচ্ছে এখানে।
আমি কোথায়?
কতক্ষন ধরে আমি এখানে? আমি কে? এই তুচ্ছ প্রশ্নগুলোর উত্তর তার কাছে আর গুরুত্বপূর্ন নয়। তার কেবল ওভাবেই সেই অন্ধকার
জগতটাতে ভেসে থাকতে মন চাইল।
আস্তে আস্তে তিনি দুভাগে বিভাজিত হয়ে গেলেন। বিভাজিত হওয়ার পরেও তিনি
কোনো ব্যথা পেলেন না। বরং অনুভূতিহীন হয়ে যাওয়ায় ব্যাপারটা সৌভাগ্যকর বলেই মনে হল
তার কাছে। আশেপাশে সবকিছু নিঃসাড়
হয়ে আছে। কোনো প্রকার হইচই নেই। এভাবে বিভাজিত হওয়াটা
স্বাভাবিক মনে হতে লাগলো তার কাছে। সবকিছু শান্ত হয়ে আছে।
কিয়োমি নিজের ইন্দ্রিয়গুলোকে পুরোপুরিভাবে সমর্পণ
করে দিলেন সেই শান্তগতির প্রবাহে……..
আচমকা যেভাবে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গিয়েছিল, ঠিক সেভাবেই তা
ফিরে এল। তিনি স্পষ্টভাবে দেখতে
পেলেন, দু’হাতে তিনি শক্তভাবে স্টিয়ারিং হুইলটা আঁকড়ে ধরে আছেন। চোখের পলক ফেলেই তিনি
সামনে তাকালেন।
দেখতে পেলেন, তিনি তীব্র গতিতে একটা টেলিফোন পোলের
দিকে ছুটে যাচ্ছেন।
অধ্যায় ১
ডেভেলপমেন্ট
১.
সেদিন সকালবেলা ফোন বাজবার আগমূহূর্ত পর্যন্ত তোশিয়াকি নাগাশিমার সকালটা খুবই সাধারন, বৈচিত্র্যহীনভাবে শুরু হয়েছিল।
সকাল ৮টা ২০ মিনিটে তোশিয়াকি ‘স্কুল অব ফার্মাসিউটিকাল সায়েন্সেস’
এর সামনে গাড়িটা পার্ক করলেন।
পার্কিং লট
তখনো অনেকখানি ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
হাতে ব্রিফকেসটা তুলে নিয়ে তিনি গাড়ি থেকে বের হলেন, অপর হাতটা দিয়ে গাড়িটা লক করলেন। কয়েক মুহূর্তের জন্য তিনি ফার্মাসিউটিকাল এর
দালানটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন।
ছয়তলা উঁচু দালানটাকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের কারনে আরো বেশি ধূসর রঙের বলে মনে হচ্ছে।
লবিতে ঢুকেই তোশিয়াকি প্রথমে একজোড়া জীবাণুমুক্ত স্যান্ডেল পরে নিলেন। তারপর লিফটে করে পাঁচতলায় চলে গেলেন। লিফটের দরজা খুলে যেতেই একটা করিডর সামনে পড়লো। করিডরের ডানদিকের
মাথায় ছিল লেকচার হল। সেখানেই তিনি ‘এডভান্সড মেথড ইন বায়োফাংশনাল সায়েন্সেস’
কোর্সটা নিয়ে থাকেন। সেখান থেকে কোনো শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। তারমানে, তিনি ভাবলেন, এখন পর্যন্ত বোধহয় শিক্ষার্থীরা আর স্টাফদের কেউ এসে পৌছায়নি।
তবে এই
কোর্সের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়, ক্লাস শুরু হতে হতে প্রায়ই দেরি হয়ে যায়। অন্যান্য অর্গানিক সায়েন্স এর
কোর্সগুলো কিন্তু কাঁটায় কাঁটায় সকাল আটটাতেই শুরু হয়ে যায়। সকাল থেকেই স্টাফ আর
শিক্ষার্থীদের পদচারনায় গমগম করতে থাকে সেগুলো। তোশিয়াকির কোর্সটাই ছিল ব্যতিক্রম। এ
কোর্সে শিক্ষার্থীদের সময়ের ব্যবহার* নিয়ে কথা শোনানো হয়না। বরং তিনি আর তার সহকর্মীরা মনে করতেন,
শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় এসে এক্সপেরিমেন্ট করে সেখান থেকে প্রাপ্ত ডাটা তাদের দেখালেই চলবে।
সামান্য একজন গবেষনা সহযোগী হয়েও তোশিয়াকি প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করতেন। যদিও তার সেটা না
করলেও চলত।
২
নম্বর ল্যাব এর দরজা খুলে লাইটটা জ্বালিয়ে তিনি ভেতরে প্রবেশ করলেন। এই ল্যাবেই
তার বসার ডেস্ক ছিল। কোটটা ঝুলিয়ে রাখার পর
তিনি বুকশেলফের পাশে ব্রিফকেসটা রাখলেন।
আগের রাতেই তার ডেস্কে শিক্ষার্থীরা দুটা রাসায়নিক পদার্থের অর্ডার ফর্ম পূরণ করে রেখে গিয়েছে।
দুটা রেস্ট্রিকশন এনজাইম EcoR I আর BamH I লাগবে তাদের। একটা পেপার ক্লিপ দিয়ে তোশিয়াকি ফর্ম দুটোকে যুক্ত করে সেটা ডেস্কের দিকের দেয়ালে পিন দিয়ে আটকিয়ে রাখলেন।
আগের দিনের নোটগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে তিনি কাজ শুরু করে দিলেন। প্রথমে তিনি ল্যাব থেকে বের হয়ে করিডরের মাথায় ‘কালটিভেশন রুম’
এর দরজাটা চাবি দিয়ে খুললেন।
ঘরটার ভেতরটা অতিবেগুনী রশ্মির আলোয় আলোকিত ছিল। তাই তিনি ভেতরে ঢোকার পর সুইচ টিপে সাধারন ফ্লুরোসেন্ট বাতি জ্বালিয়ে নিলেন।
ইনকিউবেটর থেকে তিনি দুটা প্লাস্টিকের কালচার
স্লাইড বের করে নিয়ে মাইক্রোস্কোপের নিচে রাখলেন। মাইক্রোস্কোপের ফোকাসটা
ঠিকঠাক করে তিনি লেন্সের ভেতর দিয়ে অপরপ্রান্তে থাকা স্লাইডের কোষগুলোর দিকে তাকালেন। সেগুলোর অবস্থা
দেখে সন্তুষ্ট হবার পর তিনি পুনরায় সেটাকে ইনকিউবেটরে রেখে দিলেন। অটোক্ল্যাভ থেকে কয়েকটা ইমপ্ল্যান্ট সরিয়ে সেটাকে একটা ক্লিন বেঞ্চে রাখলেন।
তোশিয়াকি ল্যাবে ফিরে এলেন।
রেফ্রিজারেটর থেকে অনেকগুলো রাসায়নিক তরল বের করলেন। ঠিক তখনই, সাচিকো আসাকুরা
নামের এক
দ্বিতীয় বর্ষের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ভেতরে ঢুকে পড়লো। তোশিয়াকি সাচিকোর’র সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছিলেন।
“শুভ স-কাল!” ভেতরে ঢোকার পর
সে বেশ হাসিখুশিভাবেই সম্ভাষন জানালো তাকে।
তোশিয়াকি প্রতিধ্বনির মত নিচুস্বরে সেটার উত্তর দিলেন।
আসাকুরা কোটটা খুলে গুছিয়ে রাখতেই দেখা গেল,
সে শুভ্রবর্ণের সামার সোয়েটার আর
জিনস পড়ে আছে। তার মাথার লম্বা চুল সে পেছনের দিকে বেঁধে রেখেছে।
সোয়েটারটা খুলে সে একটা সাদা ল্যাবকোট পরে নিল।
অন্যান্য মেয়েদের তুলনায় সাচিকো বেশ লম্বা, প্রায় ৫ ফিট ৯ ইঞ্চির কাছাকাছি। তোশিয়াকি নিজে তার থেকে কেবল ইঞ্চিখানেক লম্বা। তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় সে
হাসিমুখে মাথা নুইয়ে তাকে সম্মান জানালো। আসাকুরা’র উচ্চতার সাথে তার ল্যাব কোটটা বেশ মানিয়ে গিয়েছিল।
সে যখন এক্সপেরিমেন্টের সময় ল্যাবকোট বাতাসে উড়িয়ে ল্যাবে হাঁটাহাঁটি করত, তখন তার আবেদনময়ী ফিগারটা দেখতে বেশ লাগত।
তোশিয়াকি তাকে জানালেন, তিনি কালটিভেশন রুমে কাজ করবেন। বলেই তিনি ল্যাব থেকে বেরিয়ে পড়লেন।
ক্লিন বেঞ্চের সবকিছু ঠিকঠাক করার পর তিনি কালচার স্লাইড সরিয়ে তার কাজ শুরু করে দিলেন। তিনি যে কোষগুলো ব্যবহার
করছিলেন, মানে NIH3T3, বেশ সহজলভ্য ছিল। তিনি অবশ্য একটা স্লাইডের কোষের ভেতর রেটিনয়েড রিসেপ্টর জিন প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিলেন। দুদিন আগে আলাদা দুটো কোষের কালচারকে তিনি স্লাইডে রেখে সেটাকে ব্রিড করিয়েছিলেন। তারপর সেদিনই তিনি নির্দেশক মিশ্রনে এক ডোজ বিটা অক্সিডেশন এনজাইম যোগ করে দিয়েছিলেন।
আজকে তার পরিকল্পনা ছিল যে, তিনি দুটো স্লাইড থেকেই মাইটোকন্ড্রিয়াল ডাটা নেবেন। তার প্রত্যাশা ছিল এই
যে, যে কোষে জিন ট্রান্সফার করা হয়েছে তার বিটা অক্সিডেশন এনজাইম এর সক্রিয়তা অন্যটার তুলনায় বেশি হবে।
কাজ শুরু করতেই ফোনটা তীক্ষ্মসুরে বেজে উঠল।
তোশিয়াকি ল্যাবের ফোন রিং হতে শুনতে পেয়েছিলেন,
কিন্তু হাত কাজে ব্যস্ত থাকায় আর ল্যাবে আসাকুরা
রয়েছে বলে নড়লেন না। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন যে, আসাকুরা ফোনটা ধরবে। তিনটে রিং হবার পরেই তিনি টের পেলেন,
আসাকুরা ফোনটা রিসিভ করেছে। ল্যাবের নিঃস্তব্ধ, শান্তিময় পরিবেশ আবার ফিরে এল, তবে তা
কয়েক মিনিটের জন্য। কারণ, এরপরেই
তিনি শুনতে পেলেন কালটিভেশন রুমের দিকে ঝড়ের গতিতে পা ফেলে শব্দ করে কেউ আসছে। তোশিয়াকি কাজ করা থামালেন না, কিন্তু তার মনে একটা প্রশ্নের উদয় হল ‘এত তাড়া কিসের?’। কারনটা না বুঝতে পেড়ে তিনি আড়চোখে দেয়ালঘড়িটার দিকে তাকালেন।
ঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় নটা বাজে।
ল্যাবের দরজা শব্দ করে খুলে গেল।
“ডক্টর নাগাশিমা,
আপনার একটা জরুরী ফোন এসেছে।”
তিনি মাইক্রোস্কোপ থেকে আস্তে আস্তে চোখ উঠালেন।
দেখলেন, ল্যাবের
দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা আসাকুরা ভয়ার্ত মুখে তাকিয়ে আছে।
সে অল্প অল্প কাঁপছে।
“ফোনটা হাসপাতাল থেকে এসেছে। আ-আপনা-র স্ত্রী। তিনি একটা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।”
“কী?”
বলেই তিনি উঠে পড়লেন।
২.
ইউনিভার্সিটির হাসপাতালের
আশেপাশের রাস্তাগুলোতে সারাক্ষনই
ট্রাফিক জ্যাম লেগে থাকে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের
রুগী নিয়ে আসা গাড়িগুলো হাসপাতালের সামনের
পুরো রাস্তাটাই দখল করে রেখেছে।
প্রচন্ড চিন্তায়,
অধৈর্য হয়ে তোশিয়াকি হিংস্রভাবে গাড়ির হর্ন জোরে বাজাতে শুরু করলেন।
হাসপাতালের
জরুরী বিভাগের একজন স্টাফ তাকে ফোন দিয়েছিল। কিয়োমি গাড়ি চালানোর সময় অজ্ঞাত কারণবশত গাড়ির মাথা ঘুরানোর কারনে একটা টেলিফোন পোলের সাথে তার সংঘর্ষ হয়েছে। গাড়িটার ধ্বংসাবশেষ
এর অবস্থা এতটাই বাজে ছিল যে, তিনি ধারনা করছেন কিয়োমি হয়ত ব্রেকও চাপেনি।
কিয়োমি মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছে।
কোথায় দুর্ঘটনাটা ঘটেছে, জানার পর
তোশিয়াকি বুঝতে পারলো, রাস্তাটা সে
নিজেও নিয়মিত ব্যবহার করে। এ
রাস্তা বেশ প্রশস্ত হওয়ায় অধিকাংশই এখানে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়, তাই বলে সেটাকে বিপদজনক বলা চলে না। বরং প্রশস্ত হওয়ায় আর
আশেপাশে তেমন কিছু না থাকায় সেটাকে তুলনামূলকভাবে বেশ নিরাপদ বলে মনে করা হয়।
“ড্যাম ইট!”
তিনি রাগে চিৎকার করে উঠলেন।
বেশ নিখুঁতভাবে স্টিয়ারিং
হুইল ঘুরিয়ে মাঝের লেন থেকে বেরিয়ে এলেন। একটা ইউটার্ন নিতেই আশপাশ থেকে অসংখ্য গাড়ির হর্ন প্রতিবাদ করে শব্দ করে উঠল,
কিন্তু তিনি তাতে পাত্তা দিলেন না। বরং হাসপাতালের পেছনের গেটের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে সেখানকার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত পার্কিং স্পটগুলোর মধ্য দিয়ে গাড়ি চালিয়ে লোডিং বে এর ভেতর ঢুকে পড়লেন।
হাসপাতালে ঢোকার পর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া একজন নার্সকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিলেন ইমার্জেন্সী ওয়ার্ডটা কোনদিকে।
যত
দ্রুত তার পক্ষে দৌড়ানো সম্ভব,
ততটা গতিতেই দৌড়াতে শুরু করলেন হাসপাতালের হলওয়ে ধরে।
তার পরনে চামড়ার জুতা গোটা হলওয়ের মেঝে জুড়ে শব্দ ছড়িয়ে যেতে লাগলো। মুখে তখনো বারবার কিয়োমির নাম বিড়বিড় করেই যাচ্ছেন। ডান দিকে মোড় নিয়ে পাশের প্যাসাজওয়েতে ঢোকার সময় তিনি আরেকটু হলেই একটা বয়স্কা মহিলাকে ধাক্কা মেরে বসেছিলেন। একেবারে শেষ মুহূর্তে গা
বাঁকিয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে করিডর ধরে তিনি আবার দৌড়াতে শুরু করলেন।
তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। কি হয়েছিল আসলে? আজ সকালেও
তো কিয়োমি প্রত্যেকদিনের মতই হেসেছিল,
তাই না? সকালবেলার কথা তিনি মনে করার চেষ্টা করলেন। তারা দুজনে একসাথে বসে ডিম ভাজি, মাছ আর মিসো স্যুপের সাথে টোফু দিয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিয়েছিলেন। সেটাতেও কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না। খুবই সাধারন একটা ব্যাপার ছিল সেটা। তার মানে কিয়োমির জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে যাওয়াটা
ওটার সাথে সম্পর্কযুক্ত না। আচমকা ঘটে গিয়েছে ঘটনাটা।
সকালবেলা দুজনে একসাথে ঘর
থেকে বেরিয়েছিলেন। কিয়োমি
নিজের গাড়ি বের করে পোস্ট অফিসে যাচ্ছিলেন। গাড়িটা কেনার বেশিদিন হয়নি,
সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি ছিল সেটা। মাত্র ছ’মাস আগে কেনা, কারণ কিয়োমির শপিং করার জন্য সেটা নাকি দরকার। তার কিউট জিনিস বেশ পছন্দের, তাই গাড়িটার
লাল রঙটা তাকে বেশ আকৃষ্ট করেছিলো।
“মাফ করবেন,
আপনি কি
কিয়োমি নাগাশিমার পরিবারের কেউ হন?”
তোশিয়াকি অবশেষে শ্বাস নেবার জন্য সুযোগ পেলেন।
একজন বয়স্কা নার্স তার কাছে ছুটে এসে প্রশ্নটা করেছে।
তোশিয়াকি গলাটা পরিষ্কার করে নিলেন। তারপর ঢোক গিলে জোর করে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।
“কিয়োমির অবস্থা খুব ক্রিটিকাল পর্যায়ে আছে।” নার্স খুলে বললো। “দুর্ঘটনার
কারনে তিনি মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছেন। যখন তাকে এখানে আনা হয় তার আগে থেকেই তার মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এমনকি তার শ্বাসপ্রশ্বাসও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।”
তোশিয়াকি তার পাশ কাটিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে হলওয়েতে রাখা একটা সোফায় গিয়ে বসলেন।
কিছুক্ষন শূন্যদৃষ্টিতে অনুভূতিশূন্য
মুখে নার্সের দিকে তাকিয়ে থেকে নার্সের কথাগুলো হজমের চেষ্টা করার চেষ্টা করলেন।
“আপনারা ওকে বাঁচাতে পারবেন?”
“ইমার্জেন্সি ট্রিটমেন্টের জন্য আমরা তাকে সরাসরি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়েছি।তবে তার অবস্থা যে গুরুতর তা আমরা অস্বীকার
করছি না। তার আত্মীয়স্বজনকে খোঁজ দিয়ে এখানে আনালে বরং ভাল হবে।”
তোশিয়াকি নার্সের শেষ কথাটা শুনে নাক দিয়ে ঘোঁত করে উঠলেন।
কিয়োমির বাবা-মা ফোন দেয়ার সাথে সাথে এসে পড়লেন।
তার বাবা কাছাকাছি একটা হাউজিং ডিস্ট্রিক্ট এ একটা সার্জিকাল ক্লিনিক চালাতেন,
বাসা ছিল ঠিক তার পাশেই।
ইউনিভার্সিটির হাসপাতাল থেকে বড়জোর কয়েক মাইল দূরে হবে সেটা।
দুজনের মুখ পাংশু বর্ণের হয়ে গিয়েছিল। কিয়োশির বাবা তোশিয়াকিকে কিয়োমির সর্বশেষ অবস্থা কি, তা জিজ্ঞেস করলেন। কিয়োমির অবস্থা
শুনে তিনি ঢোক গিললেন। ঐ
অবস্থাতেই চোখ বন্ধ করে ধপ
করে সোফায় বসে পড়লেন।
কিয়োমির মা সাধারনত নিজের অনুভূতিগুলোকে একটা হাসির আড়ালে রেখে সর্বদা শান্ত থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু আজ রুমালে মুখ ঢেকেও যেন তার কান্না থামাতে পারছিলেন না। এরকম যে ঘটতে পারে, তা তোশিয়াকি ভাবতেও পারেনি। বিদ্যুতের ঝটকার মত তার বোধোদয় হল : কিয়োমির
বাবা-মাও যে মানুষ।
এটাই তো
স্বাভাবিক ব্যাপার হবার কথা।
প্রথমবারের মত যখন কিয়োমির বাসায় তাকে নিমন্ত্রন করা হয়েছিল, সে বুঝতে পেরেছিল কিয়োমির পরিবার খুবই শান্তিপূর্ন, ঝুটঝামেলা বিহীন একটা পরিবার। সবাই নিখুঁতভাবে পোশাক পরা,
সবার মুখে হাসি, একসাথে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে, দামি সব আসবাবপত্রে বসে একে অপরের সাথে আড্ডা দিচ্ছে-
শান্তশিষ্ট জাপানিজ পরিবারের একেবারে উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছিল সেটি।
তোশিয়াকির মনে তাদের পরিবার ছিল
‘নিখুঁত’। ঐ যে, টিভিতে অনেক সময় যে নিখুঁত পরিবার দেখায়, অনেকটা
সেরকমই তার কাছে মনে হয়েছিল।
তার সামনে যে বিপর্যস্ত পরিবারটাকে সে অবলোকন করছিলো,
তা যে
ঐ একই
‘নিখুঁত’ পরিবার- তা বিশ্বাস করতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছিল। এখন তারা রাখঢাক না
করে যে
অনুভূতিটা দেখাচ্ছেন,
তা একেবারে আদিম, মুখোশ ছাড়া অকৃত্রিম একটা অনুভূতি।
“শান্ত হও…”
এটুকু বলে তোশিয়াকির শ্বশুর তার স্ত্রীকে ভৎসনা করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু
নিজের গলার কাঁপা কাঁপা ভাবটা থামাতে পারলেন না। তার স্ত্রী তার দিকে বড়বড় চোখে তাকিয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারলেন
না। গলা ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে তার স্বামীর গায়ে গা এলিয়ে দিলেন।
দুপুর অনেকক্ষন আগেই পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কারোরই
খিদে পায়নি।
নার্সের কথামত তারা ওয়েটিং রুমে বসে ঘড়ির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলেন। কিছুক্ষন পরপর নার্স এসে তাদের আপডেট দিয়ে যেতে থাকলো। ম্যাসাজ করে তারা কিয়োমির শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থা চালু করতে পেরেছেন। কিন্তু এখনো তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বিধায় কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা
করতে হয়েছে।
বেশ কয়েকটা সিটি স্ক্যানের পর
তাকে আইসিইউ তে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
টানা তিরিশ মিনিট পর
একজন ডাক্তার অবশেষে বের হয়ে আসলেন। সকলে একসাথে
সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। ডাক্তারের বয়স কম, দেখে মনে হচ্ছে তিরিশের ঘরেই হবে।
তবে তার মুখটা দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেন পাথর খোদাই করে বানিয়েছে। তার চোখে একটা শান্ত,
স্নিগ্ধ ভাব লেগে ছিল। তাকে দেখে তোশিয়াকি মনে মনে একটু আশ্বস্ত হলেন। ডাক্তার নিজেকে
একজন ব্রেন সার্জারি স্পেশালিস্ট হিসেবে পরিচয় দিলেন। তাদের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে শান্ত স্বরে এখন পর্যন্ত যা যা
ঘটেছে তা বলতে শুরু করলেন।
“কিয়োমি বেশ মারাত্মক পাওয়ার কারনে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমাদের ওয়ার্ডে
আনার সাথে সাথে আমরা তার মস্তিষ্কে অপারেশন করা শুরু করেছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, যেভাবেই
হোক তার হার্ট আর ফুসফুস আগে বাঁচাতে হবে।
এখন তিনি কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাস নিচ্ছেন।
তিনি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। তবে আমরা আমাদের মেডিকেশন চালিয়ে যাব। তার হার্টকে বাঁচিয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করব আমরা, একই সাথে তার শারীরিক অবস্থার দিকে তীক্ষ্ম নজর রাখব। এখন তিনি গভীর কোমায় চলে গিয়েছেন। তবে দুঃখজনক হলে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, ধীরে ধীরে কিয়োমি ব্রেন ডেথের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ...........।”
কিয়োমির মায়ের মুখ থেকে অজান্তেই যে অবর্ণীয় কষ্টের “কী??” বেরিয়ে
এল, তা ঢাকতে তিনি সাথে সাথে মুখটা চাপা দিলেন।
এরকম অবস্থায় তোশিয়াকি বুঝতে পারছিল না, ডাক্তারের
কথার প্রত্যুত্তরে তার কি বলা উচিত। তার মাথার ভেতর তখন
‘কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থা’, ‘গভীর কোমা’,
‘ব্রেন ডেথ’
শব্দগুলো ঘূর্ণির মত ঘুরছে। তার স্ত্রীর বর্তমান অবস্থা বোঝাতে গিয়ে এরকম শব্দগুলো যে
ব্যবহার করা হচ্ছে, তা তিনি মানতেই পারছেন না।
আচমকা তোশিয়াকির প্রচন্ড গরম লাগতে শুরু করলো।
সে উপরে তাকালো। তার প্রচন্ড
গরম লাগছে।
মনে হচ্ছে কেউ যেন শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
অথচ ঘরটার তাপমাত্রা আগের মতই আছে। মনে হচ্ছে উত্তাপটা শরীরের ভেতর থেকে বের হচ্ছে। উত্তাপটা বাড়তে শুরু করায় সে
অস্বস্তিভরে আশেপাশে তাকালো। কিন্তু চারদিকের
কিছুই তার চোখে পড়লো না। আশেপাশে সবকিছু তার দৃষ্টি থেকে হারিয়ে গিয়েছে, সেখানে
জায়গা করে নিয়েছে কেবল রক্তিম বর্ণের একটা পর্দা । ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তিও সে
হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে হতে লাগলো। তিনি চিৎকার
করার জন্য মুখটা খুললেন, কিন্তু
একটা ক্ষীণ আওয়াজ বাদে আর
কিছুই বের হল না তার মুখ থেকে।
গলার ভেতরের স্বরযন্ত্রটা যেন হারিয়ে গিয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে
তার আঙ্গুলের ডগা থেকে আগুন বের হওয়া শুরু হতে পারে। পুড়ে যাবে সে, এক্ষুনি
গায়ে আগুন ধরে পুড়ে মারা যাবে সে।
“তার কি
হবে?”
উত্তপ্ত অনুভূতিটা তার শরীর থেকে বিদায় নিল। প্রশ্নটা
তার শ্বাশুড়ি করেছেন। তিনি ডাক্তারটাকে
তখন একের পর এক প্রশ্ন
করে যাচ্ছেন।
“আমরা এখনো তার ব্রেন ওয়েভ,
ব্লাড প্রেশার আর হার্টের গতি মনিটর করছি।
যদি তার মস্তিষ্কে রক্তের প্রবাহ কোনোভাবে ব্যাহত হয়, তার মস্তিষ্কের কোষগুলো
নষ্ট হতে শুরু করবে। আমরা সিটি স্ক্যান করে সবকিছু পর্যবেক্ষন করছি।
টেস্টের রেজাল্ট পেলেই আমরা জানিয়ে দিতে পারব তার ব্রেন ডেথ হয়েছে কিনা।”
ডাক্তারের গলার আওয়াজ কোথা থেকে আসছে, তা তোশিয়াকি বুঝতে পারছিলেন না। চোখ ঠিক আছে কিনা তা বোঝার জন্য নিচে তাকিয়ে বেশ কয়েকবার চোখ পিটপিট করলেন। তার বাম হাতটা তার চোখে পড়ল। তিনি চেষ্টা করলেন হাতটা নাড়াতে। দেখতে পেলেন, হাতটা অল্প অল্প নড়ছে। যাক তিনি ভাবলেন। অন্তত সেখান থেকে আগুন বের হচ্ছে না।
যখন তার সকল অনুভূতি ফিরে এল, তিনি দেখতে পেলেন কিয়োমির মা তার স্বামীর পাশে গিয়ে দাড়িয়েছেন। ডাক্তার তাদের বলছেন যে, ব্রেন ডেথের পরীক্ষাটা করতে করতে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত
লেগে যেতে পারে। তোশিয়াকির মাথাটা ঘুরে উঠল। সে
সোফায় ধপ
করে বসে পড়লো। এতক্ষন ধরে যে হ্যালোসিনেশন শিকার তিনি হয়েছেন,
তার রেশটা এখনো কাটেনি। তার মাথাটা এখনো দপদপ করছে।
“আপনি ঠিক আছেন?” ডাক্তার তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
তোশিয়াকি হাত নাড়িয়ে তাকে সরে যেতে বললেন।
কিয়োমি মারা যাচ্ছে।
তার মনে হতে লাগলো,
কেউ তার সাথে প্রতারণা করছে।
আশেপাশে যা
কিছু ঘটছে,
সবকিছু তার অপরিচিত একটা দুনিয়ায় ঘটছে। হ্যাঁ, এটাই একমাত্র সত্যি বলে মনে হল
তার কাছে।
তার শরীরটা তখনো উত্তপ্ত হয়ে আছে। এর মানে কী? তার মাথায় ঢাকের বাদ্যের মত
দপদপ শব্দের মধ্যেও তার মনে প্রশ্ন জাগলো, “এই উত্তাপটার উৎস কী?”
No comments:
Post a Comment