Monday 24 June 2019

নাম নেই এখনো আপাতত

ভূমিকাঃ



" সবার আগে মারা যাবে সিফ জাতি।......আর তাদের মৃত্যুর কারণ হবে......... " 
এটুকু বলে কাশতে শুরু করলেন ডাক্কার সেরা ডাইনি ও ভবিষ্যৎ গননাকারি ইভা ওরফে ডাইনি ইভা। পুরো ডাক্কাতে তার মত জাদুবিদ্যায় পারদর্শী কেউ নেই। আর ভবিষ্যৎ গণনায়? সেটা যে কত ভাল, তা ভালমতই বোঝা যায় তার দোকানে সবসময় ব্যবসায়ি, জমিদার, এমনকি রাজপ্রাসাদের চরদের আনাগোনা দেখলেই। 

বিকট শব্দ করে কিছুক্ষন কাশার পর স্থির হলেন ডাইনি ইভা। আচমকা পাশে রাখা ওয়াইনের বোতলটা হাতে নিয়ে গলায় ঢালা শুরু করলেন। ঢকঢক করে কিছুক্ষন গেলার পর হাড্ডিসার বাম হাতের উল্টোপাশ দিয়ে মুখটা মুছে নিলেন। চোখ কুঁচকে তার খদ্দেরকে দেখার চেষ্টা করলেন তিনি। নাহ, চেনা যাচ্ছে না। ছ্যাঁচড়া কেউ না, ব্যবসায়ি ত নয়ই। একটা সম্ভ্রান্ত আভা বের হচ্ছে আগন্তুকের গা থেকে। তবে কি রাজপ্রাসাদ থেকে কেউ? 

গাঁক গাঁক করে তিনি তাকে শুনিয়ে বললেন, " আমি কিন্তু নগদ ছাড়া কাজ করি না। তার ওপর এত বড় একটা কাজ, একটু বেশি খরচের ব্যাপার-স্যাপার আছে। সামলাতে পারবে ত? " 

একটু বাজিয়ে দেখতে চাইলেন আগন্তুককে। যদি রাজপ্রাসাদের ভেতরের কেউ হয়, তবে ক্ষেপে ওঠার কথা। টাকা, মদ আর মেয়েমানুষ নিয়ে কথা তুললেই এরা ক্ষেপে ওঠে।  হারেম থেকে কেউ আসলে তর্ক শুরু করে দিবে, টাকা নিয়ে মূলামূলি করবে। আর যদি........

আগন্তুক যে আলখেল্লা দিয়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছিল, সেটা একটু সরিয়ে এক হাত দিয়ে একটা মসলিন কাপড়ের থলে ডাইনির সামনে ফেলে দিল। টেবিলে পড়তেই ঝনঝন করে উঠল। আওয়াজ শুনে চমকে উঠল ডাইনি। স্বর্নমুদ্রা হাতে অত না আসলেও সেটার ওজন ও আওয়াজ ভালভাবেই জানা আছে তার। থলেটা ফেলে দেবার পর দ্রুত আবার হাত ভেতরে গুটিয়ে নিল আগন্তুক। তবে তার হাতের লাল রুবি পাথরের আংটিটা চোখ এড়ালো না ডাইনির। প্রদীপের আলোয় ঝিক করে ওঠায় ভালভাবে নজরে পড়েনি আংটিটা, তবে বোঝা গেল কিছু একটা খোদাই করা ছিল তাতে। 

এবার একটু সতর্ক হল ডাইনি ইভা। আংটি থাকা ও খোদাই করার একটাই অর্থ, এই ব্যক্তি সম্রাটের সাথে সরাসরি ভাবে জড়িত। কেবল সম্রাটের কাছের মানুষ ও রাজপরিবারের লোকেরাই কেবল এটা পরতে পারে। অনেকটা বিশেষ পরিচয়পত্রের মত কাজ করে সেটা। এই আংটি থাকলে গোটা সাম্রাজ্যে কোনো বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই যাতায়াত করা যায়। তবে একই সাথে এটা অনেক সমস্যারও সৃষ্টি করে। ব্ল্যাক মার্কেটে আংটিগুলোর প্রচুর দাম, পাচ-ছয়শ স্বর্নমুদ্রার মত। আর স্বর্নমুদ্রা সেরকম কেউ জমাতে পারলেও যে আংটি হাতে এসে পড়বে, তার নিশ্চয়তা নেই। যারা আংটির অধিকারী, তাদেরকে ডাকাতি করতে হবে, অথবা খুন করতে হবে। আর সেটা করাও কঠিন কাজ। তারা একপাল দক্ষ সৈন্য ছাড়া কোথাও ঘোরাফেরা করে না। সেই সৈন্যগুলো আবার যে সে কেউ না, একেবারে খোদ হিয়াক্কা জাতির........

ডাইনিবুড়ির চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটালো আগন্তুক। খসখসে গলায় জিজ্ঞেস করল, " এইটুকুতে জানা যাবে ত?  "

একেবারে গলায় মধু ঢেলে উত্তর দিল ডাইনি, " জ্বি হুজুর, জানা যাবে। কিন্তু এইরকম, মানে গোটা সাম্রাজ্যের পতন নিয়ে কেউ জানতে চায়নি আগে, তাই..ব্যাপারটা একটু কঠিন। আমি সাধ্যমত চেষ্টা করছি।  "

" তাড়াতাড়ি করুন। " তাড়া দিল আগন্তুক। " আমাকে এর পর এক জায়গায় যেতে হবে। আর না পারলে  " যেন অবজ্ঞার সুরে বলল, " ইভা ডাইনির  প্রতিপত্তি কতটুকু থাকে, সেটা আমি দেখবো। "

একটু ভয়ই পেলেন ডাইনি।বুড়ি হলেও প্রানের মায়া রয়েছে তার। এ বয়সে এই ব্যবসা বন্ধ হলে মুখে দেবার জন্য কিছুই জুটবে না। কেউ নেই তার, ছোটবেলায় একদল বেদের কাছে বড় হয়েছেন। তাদেরকে ছেড়ে যুবতি বয়েসে এই ডাক্কাতে দোকান খুলে বসেন তিনি। তারপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। টুকটাক হাত দেখা শিখেছিলেন তিনি বেদে পরিবারের কাছেই। আর ভবিষ্যত গণনা.....তা শিখেছিলেন এক 'নিহ' জাতির প্রাণির কাছে। নিহ জাতি খুবই দুর্লভ এ যুগে, অনেকে ত বিশ্বাসও করতে চায় না যে ওদের অস্তিত্ব রয়েছে। অথচ পূর্বের সকল সভ্যতা গঠনে ওদের হাত ছিল। জাদুবিদ্যায় সেরা ছিল ওরা, নিজেদের বাইরে তারা সেটা কাউকে শেখাতে চাইত না। ইভা শিখেছিল ভাগ্যের ফেরেই। বেদে পরিবারের সাথে যাযাবরের মত জীবন কাটানোর সময় এক গুপ্ত পাহাড়ের পাদদেশে অর্ধমৃত অবস্থায় খুঁজে পেয়েছিল সেই প্রানিকে। তার সেবা-শ্রশ্রুষা করে সুস্থ করার চেষ্টা করেছিল ছোট্ট ইভা। কিছুটা সুস্থ হলেও হাঁটার ক্ষমতা অনেকখানি হারিয়ে ফেলেছিল সে। তার নাম ছিল একটু অদ্ভুত, নিহ জাতির ভাষা ছিল আলাদা। 'এলান্দর ক্রিসরেল', তাই ইভা তাকে ক্রিস বলেই ডাকত। 
 

No comments:

Post a Comment

আরো যা দেখতে পারেন