the lonely songs of laren dorr - george r r martin
মেয়েটা একজগত থেকে অন্য
জগতে আসা যাওয়া করে ।
ধূসর চোখ আর মলিন ত্বকের
অধিকারিনী সে, অন্তত তাই শোনা যায় । আর তার চুল কুচকুচে কালো কয়লার ঝরণাধারার মত , অস্পষ্ট লাল রঙের আভাস দেয়া যায় এখানে সেখানে
। মেয়েটা একটা চকচকে কালো
রঙের মুকুট পড়ে থাকে । মুকুটটা তার অবাধ্য
চুলগুলোকে একটু শাসন করে ধরে রাখে । মাঝেমধ্যে সে চোখের নিচে হালকা শ্যাডো ব্যবহার
করে ।
মেয়েটার নাম শাররা এবং
সে ‘দরজা ’ গুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখে ।
তার গল্পের শুরুটা
আমাদের জানা নেই , যেটা থেকে আমরা জানতে পারতাম সে কোথায় জন্ম নিয়েছিল । কি ?
গল্পের শেষটুকু জানি কিনা ? নাহ, গল্পের শেষ হয়নি এখনো । অবশ্য গল্পের শেষ হলেও
আমরা জানতে পারব না ।
আমরা শুধু গল্পের
মধ্যকার অংশ ; সঠিকভাবে বলতে গেলে সুবিশাল গাঁথাটির অতিক্ষুদ্র একটুকরো সম্পর্কে
জানি । অতিবৃহৎ গাঁথাটির একটি ছোট গল্প—যা কিনা আমাদের জানিয়ে দেয়
শাররার জগত আর নিঃসঙ্গ গায়ক ল্যারেন ডর সম্পর্কে , এবং সেই সেই সময়টার কথা , যখন
তারা একে অপরের সাথে পরিচিত হয়েছিল ।
* * * * * *
বিশাল মাঠটাই একমুহুর্তের জন্য গোধূলির আলোটা ধরতে পেরেছিল । পড়ন্ত
সূর্যটা শৈলশিরায় এসে যেন থেমে
গেল । সূর্যের রশ্মিগুলো তীর্যকভাবে গভীর বনের গাছগুলোর কালো চকচকে গাছের
ডাল আর বর্ণহীন গাছের পাতার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল
। পুরো বনে কেবল মোর্নি ঘুঘু , যারা কিনা রাতে বেরোয় ; আর বনের ভেতর দিয়ে
বয়ে যাওয়া ঝরণার স্রোতের শব্দ শোনা যাচ্ছিল ।
হঠাৎ করে অজানা এক ‘দরজা’ দিয়ে শাররা
ক্লান্ত ও রক্তাক্ত অবস্থায় লারেন ডর এর জগতে প্রবেশ করল । সে একটা সাধারন সাদা
রঙের ড্রেস পড়েছিল , যাতে রক্তের দাগ ও ঘামের কারনে দাগ পড়ে গিয়েছে । তার পিঠের
পুরু ফারের তৈরি আলখেল্লাটা কে জানি অর্ধেক টেনে ছিড়ে ফেলেছে । আর তার বাম হাত এর
কেটে যাওয়া অংশ থেকে তখনো রক্ত ঝরছিল । কাঁপতে কাঁপতে সে ঝরনার পাশে গিয়ে দাড়ালো, আশেপাশে কেউ আছে কিনা তা যাচাই করে নিল সন্দেহের চোখে , এরপর ঝপ করে বসে
পড়ল তার রক্তাক্ত হাতটার তদারকি করতে । ঝরনার পানিটা দ্রুত প্রবাহিত হলেও রঙ ছিল
কালো বা গাড় সবুজের কোনো মিশ্রনের মত । সেটা ব্যবহারের যোগ্য
কিনা তা যাচাই করার কোনো সুযোগ নেই । তবে শাররা ক্লান্ত আর
তৃষ্ণার্ত থাকায় সেটা নিয়ে আর ভাবছে না । সে সেখান থেকে এক আঁজলা পানি মুখে দিলো ,
রক্তাক্ত হাতটা যতটুকু পরিষ্কার করা সম্ভব ততটুকু করল । এরপর গায়ের কাপড় ছিঁড়ে সে হাতটা ব্যান্ডেজ করল । সূর্য যখন ডুবতে শুরু করল, সে আস্তে আস্তে ঝরনা
থেকে সরে গিয়ে একটা বনের গাছগুলোর নিচের অপেক্ষাকৃত ভাল জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়ল । চোখে তখন ক্লান্তিতে ঘুম ভর
করেছে ।
হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে লক্ষ্য করলো, কেউ তাকে
খুব সহজেই আলগিয়ে কোলে তুলে নিয়েছে । এরপর কোথাও যাওয়া শুরু করতেই সে নড়েচড়ে উঠল ।
কিন্তু হাতগুলো যেন আরো শক্ত হয়ে এঁটে বসে তাকে ধরে রাখল । “ শান্ত হও । ” মোলায়েম স্বরে কেউ বলে উঠল । আবছা আলোর মধ্যে
সে একটা পুরুষের চেহারা দেখতে পেল । চেহারাটা ছিল লম্বাটে আর ভদ্র বলেই মনে হচ্ছিল
তাকে দেখে । “ তুমি এখন খুবই দুর্বল। ” সে বলল । “রাত নামছে শীঘ্রই । আমাদের কোথাও
আশ্রয় নেয়াটাই ভাল হবে । ”
শাররা আর তাকে বাঁধা দিল না , অথচ তার বাঁধা দেয়াটাই যৌক্তিক ছিল । অনেক
পরিশ্রমের পর সে এখন ক্লান্ত , শরীরে একফোঁটাও শক্তি নেই । পুরুষটার দিকে সে বিভ্রান্তির
চোখে তাকালো , “ কেন ? ” উত্তর শোনার জন্য অপেক্ষা না করেই আবার প্রশ্ন করল, “ তুমি
কে ? কোথায় যাচ্ছি আমরা ? ”
“ নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছি আমরা । ” সে উত্তর দিল ।
“ তোমার বাসা ? ” ঘুমের ঘোরে সে প্রশ্ন
করল ।
“না । ” সে বলল । তার গলা এতটাই স্নিগ্ধ আর মোলায়েম ছিল
যে, তার কথা শুনতে শাররার খানিকটা কষ্ট হচ্ছিল । “ না, বাসা নয়, কোনোভাবেই বাসাতে নয়
। কিন্তু যেখানে যাচ্ছি, সেটাও খারাপ নয় । ”
এমন সময় শাররা ঝপাস ঝপাস শব্দ শুনতে পেল
। বোধহয় আমরা কোনো ঝরণা পার হচ্ছি , সে ভাবল । কোলে থাকা অবস্থাতেই সে সামনে একটা বিশাল
কুচকুচে কালো রঙের তিন টাওয়ার বিশিষ্ট দূর্গ দেখতে পেল । আশ্চর্য ত, সে ভাবল । এটা
ত আগে সেখানে ছিলনা ।
আস্তে আস্তে সে ঘুমিয়ে পড়ল ।
*****************
ঘুম ভাঙ্গতেই সে দেখতে পেল, পুরুষটা তার
দিকে তাকিয়ে আছে । সে একস্তুপ নরম, উষ্ণ চাদরের ওপর শুয়ে ছিল । বিছানাতে
পর্দার ব্যবস্থা থাকলেও সেটা উপরে তুলে রাখা হয়েছিল । ঘরটির গৃহকর্তা তার বিছানা
থেকে দূরে একটা বড়সড় চেয়ারে বসেছিল, রাতের অন্ধকারের আলো-ছায়ার মাঝে তার মুখটা
ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। মোমবাতির টিমটিমে বাতি তার চোখে প্রতিফলিত হচ্ছিল, তার দুটো
হাতের সংযোগস্থানের ওপর বেশ সুন্দরভাবেই থুঁতনিটা বিশ্রাম নিচ্ছিল । বিন্দুমাত্র
না নড়েই সে জিজ্ঞেস করল, “ এখন কেমন বোধ করছ ? ”
সে উঠে বসতে গিয়ে লক্ষ্য
করল, সে নগ্ন । সাথে সাথে চিন্তা করার আগেই তার হাতটা মাথার ওপর চলে গেল। তার কালো
মুকুটটা আগের জায়গাতেই ছিল। কেউ সেটা উঠিয়ে নেয়নি , বহাল তবিয়তেই সেটা তার ঠান্ডা,ধাতব
অংশ দিয়ে কপালে লেগে আছে । শান্ত হয়ে সে বালিশে হেলান দিল, নিজের লজ্জ্বা ঢাকার
জন্য চাদরটা অনেকদূর টেনে নিল। “ অনেকটা ভাল বোধ করছি । ” সে উত্তর দিল । তার সকল ক্ষত অদৃশ্য হয়ে
গিয়েছে, সে লক্ষ্য করল ।
লোকটা মৃদু হাসল, অনেকটা
জ্ঞানীর মত,প্রচ্ছন্ন দুঃখে মেশানো ছিল সে হাসি । তার মুখটা ছিল সুগঠিত, কালো কুচকুচে কোঁকড়ানো চুল
চোখ পর্যন্ত লম্বা আর চোখদুটো স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বড় ছিল। বসে থাকা সত্বেও
বোঝা যাচ্ছিল, সে বেশ লম্বা।
No comments:
Post a Comment