Friday 5 June 2020

প্যারাসাইট ইভ ( Parasite Eve) by হিদেয়াকি সেনা ( Hideaki Sena)- 4




.


ডক্টর তাকাশি ইয়োশিজুমির সাথে ওদাগিরি সাড়ে এগারটার দিকে যোগাযোগ করেছিল তাকে জানানো হয়েছিল যে, ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে একটা ডোনার পাওয়া গিয়েছে ইয়োশিজুমি তখন রোগীদের ফাইল পড়ছিলেনডোনারশব্দটা অবশেষে তার মনোযোগ কেড়ে নিতে পারলো

ডোনার ২৫ বছর বয়সের একজন নারী ইন্ট্রাসেরেব্রাল হেমোরেজ হওয়ার ফলে এখন ব্রেন ডেড পর্যায়ে আছে আজকেই তাদের পরিবারের সাথে আমার কথা হয়েছে এবং তারা ডোনার হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন

কোঅর্ডিনেটরের প্রতিটা কথায় সায় দিয়ে ইয়োশিজুমি সংক্ষেপে কথাগুলো তার মেমো প্যাডে টুকে নিলেন আজুসা ওদাগিরি গতবছর কোঅর্ডিনেটরে পদে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু তার আগে থেকেই তিনি ডোনার ফ্যামিলির সাথে যোগাযোগ কাজ আদায় করে নেবার কাজে জনপ্রিয় ছিলেন ইয়োশিজুমির সাম্প্রতিক কিছু কেসের জন্য তিনি ওদাগিরির ওপর কৃতজ্ঞ কারণ, ওদাগিরি সবকিছু সামলে নিয়েছে বলেই অপারেশনগুলো সফল হয়েছে

ইয়োশিজুমি সিটি সেন্ট্রাল হাসপাতালে(CCH) চাকরি করতেন গোটা অঞ্চলের মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয় যখন ব্রেন ডেড রোগীদের পরিবার তাদের রোগীদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করে দেয়, তখন উপস্থিত চিকিৎসককে সিসিএইচ(সিটি সেন্ট্রাল হাসপাতাল) ফোন দিয়ে জানাতে হয় তখন ট্রান্সপ্ল্যান্ট কো-অর্ডিনেটর সশরীরে এসে রোগীর পরিবারে সাথে দেখা করে, সেই সাথে ট্রান্সপ্ল্যান্টের নিয়মকানুন ব্যাখ্যা করে যদি তারা সেসকল নিয়মকানুন মানতে রাজি হয়, কো-অর্ডিনেটর তখন সম্মতিপত্রে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে নেয় যারা আগে থেকেই অর্গান ব্যাংকে রেজিস্ট্রেশন করে থাকে, তাদের ক্ষেত্রেও এই নিয়মের ব্যত্যয় হয় না কারণ পরিবারের সম্মতি ছাড়া কোনোরকমের ট্রান্সপ্ল্যান্টই করতে দেয়া হয় না

আমাদের কাছে ক্যান্ডিডেট এর রিসিট টা আছে আপনাকে সব ডাটা ইলেক্ট্রিক্যালি পাঠিয়ে দিচ্ছি

ইয়োশিজুমি সমর্থন জানিয়ে মাথা নাড়লেন তারপর স্টার্ট বাটনে চাপ দিয়ে কম্পিউটার অন করলেন

সকল তথ্যাদি তার কাছে চলে আসছে, তার মানে প্রস্তুতি অনেকখানি নেয়া হয়ে গিয়েছে এখানে, মানে সিসিএইচ(CCH) প্রার্থীদের বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় প্রক্রিয়াগুলোর পরেই কেবল তারা প্রার্থীদের বাছাই করে প্রথমে ডোনারের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়া হয় ল্যাবে সেই রক্তের এবিও(ABO)  এইচএলএ(HLA) টাইপ বের করা হয় বিভিন্ন রোগবালাই আছে কিনা, তা পরীক্ষার জন্য আলাদা টেস্ট তো রয়েছেই আর এসব ডাটা হাতে নিয়ে কো-অর্ডিনেটর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেন

সিসিএইচকে অঞ্চলের কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রধান জায়গা বলা হয় এখানে প্রতিমুহূর্তে অসংখ্য রোগির ফাইল এসে জমা হয় প্রত্যেকের একই ইচ্ছা- তাদের একটা কিডনির প্রয়োজন আপনারা কি সেই ইচ্ছা পূরন করতে পারবেন?
এসব ফাইলে তাদের নাম-ধাম, জন্মতারিখ, বর্তমান অবস্থা, একই সাথে পূর্বের সকল রক্ত পরীক্ষা, অন্যান্য ট্রান্সপ্ল্যান্ট(যদি থাকে) আর ডায়ালাইসিস বিষয়ক তথ্য থাকে কেবল এই অঞ্চলেই প্রায় ৬০০ সংখ্যক মানুষ কিডনির জন্য ওয়েটিং লিস্টে নাম লিখিয়েছেন প্রথমে যাদের রক্তের গ্রুপের সাথে ডোনারের রক্তের গ্রুপ মিলে যায়, তাদেরকে বেছে নেয়া হয় তারপর সেই বাছাই করা মানুষগুলোকে ডোনারের সাথে তাদের এইচএলএ এর সামঞ্জস্যতার ভিত্তিতে র‍্যাংকিং করা হয় যেহেতু কিডোনি দুটো, তাই এই তালিকা থেকে প্রথম দুজনকে বেছে নেয়া হয়

দুজনের একজনকে ইয়োশিজুমির হাসপাতাল থেকেই সাধারনত বেছে নেয়া হয় এর একটা আংশিক কারণ হল, কো-অর্ডিনেশন এর দায়িত্ব তারাই পালন করে তাদের হাসপাতালের সবচেয়ে উপযুক্ত রোগীদের টেস্ট করা হয়, তারপর সেখান থেকে সুযোগ্য একজনকে বাছা হয় ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য যদি এই অঞ্চলে কোনো যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায়, তখন তারা চিবা(Chiba) এলাকার সাকুরা ন্যাশনাল হাসপাতালে যোগাযোগ করে তারাই দেশের অন্য কোনো প্রান্তে কিডনি পাঠিয়ে দেয় যদি কাজটা দ্রুত না করা হয়, তবে কিডনিটা অনেকসময় তারা নিতে পারে না কিডনি আর সতেজ থাকেনা, ক্ষমতাও অনেকখানি হারিয়ে ফেলে এজন্যই প্রথমে এলাকাভিত্তিক রোগী বেছে নেয়া হয় তাই তাদের সিদ্ধান্ত অবশ্যই যুক্তিযুক্ত

ইয়োশিজুমি ফোনের রিসিভারটা কাঁধে রেখে টাইপিং করা শুরু করলো কো-অর্ডিনেটরের পাঠানো ডাটা কম্পিউটারের পর্দায় এসে গিয়েছে তালিকাটা স্ক্রল করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন তিনি

প্রথম জন হল মারিকো আনজাই, আর দ্বিতীয় জন হল মাতসুজো ইওয়াতা দুজনকেই বেছে নেয়া হছে এদের মধ্যে মিস আনজাই এর দায়িত্ব আপনার ওপর দেয়া হল

নামটা তার কাছে খুব চেনা চেনা মনে হতে লাগলো কিছুক্ষন কপাল কুঁচকিয়ে চিন্তা করার পর মনে পড়তেই তিনি বিস্মিত হয়ে গেলেন নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে তিনি প্রথম জন, মানে মারিকোর ডাটাগুলো ভালভাবে দেখা শুরু করলেন হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়েছে তার বয়স ছিল মোটে ১৪, অথচ তার মধ্যেই তার একবার ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়ে গিয়েছে তাও আবার এই হাসপাতালেই ইয়োশিজুমি এবার মারিকোর এইচএলএ এর সাথে ডোনারের সামঞ্জস্য কতখানি তা বের করলেন শূন্য সংখ্যক অসামঞ্জস্যতা একেবারে মিলে গিয়েছে

মারিকো আনজাই

না এবার আর ভুল হচ্ছে না

এই মেয়ের ওপরেই তিনি দু'বছর আগে অপারেশনটা করেছিলেন

তার ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য তার বাবার কিডনি ব্যবহার করা হয়েছিল কিন্তু ট্রান্সপ্ল্যান্টটা ব্যর্থ হয়েছিল অপারেশন ভালমতই শেষ হয়েছিল, কোনো ধরনের সমস্যার উদয় হয়নি তখন তা সত্ত্বেও তার শরীর কিডনিটাকে গ্রহন করতে পারেনি শেষমেষ সেটাকে বের করে ফেলতে হয়েছিল ইয়োশিজুমি নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরলেন এই কেসটা তার মনে অনেক অনুশোচনা তৈরি করেছিলো

এইচএলএ মানে হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন জিনিসটা একটা জেনেটিক মার্কার বলা যায় মনুষ্য কোষের ওপরের পৃষ্ঠে থাকে সেটা প্যাথোজনিক কোষের এইচএলএ এর সাথে কোনো মানুষের এইচএলএ এর পার্থক্য রয়েছে যখন মানুষের শরীর  অসুস্থ হয়, অচেনা এইচএলএ গুলোকে শত্রু ভেবে সেগুলোকে স্বভাবতই ধ্বংস করা হয় ট্রান্সপ্ল্যান্টে যে অঙ্গ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানেও এইচএলএ রয়েছে যদি ওটার অ্যান্টিজেনের সাথে রোগীর অ্যান্টিজেনের পার্থক্য থাকে, তাহলে অঙ্গ ঠিকঠাক মত কাজ করতে পারে না, অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয় এই কারনে ট্রান্সপ্ল্যান্টের সময় একই অ্যান্টিজেন রাখাটা ডাক্তারদের পছন্দ তবে রক্তের গ্রুপের মত এই এইচএলএ কে কিন্তু সহজ একটা গ্রুপে ফেলে দেয়া যাবেনা এইচএলএ এর ছয়টা ভাগ রয়েছে- , বি, সি, ডিআর, ডিকিউ এবং ডিপি প্রত্যেকটার আবার দশ বা দশের বেশি সদস্য রয়েছে ট্রান্সপ্ল্যান্টের ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক পরীক্ষার সময় , বি আর ডিআর টাইপগুলোর সাথে তা তুলনা করা হয় এই তিনটে অ্যান্টিজেন গ্রুপ বংশসূত্রে পাওয়া যায়- সবার থেকে একটি করে সংক্ষেপে বললে, ছয় জোড়া অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয় কিন্তু অ্যান্টিজেন এর প্রচুর সংখ্যার কারনে সম্পূর্ন ম্যাচ করে, এমন ডোনার পাওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় এমনকি ভাইবোনের মধ্যেও ম্যাচ হবার সম্ভাবনা চারভাগের একভাগ আর পরিবারের বাইরে? সেটা দশহাজার ভাগের একভাগ তাই এক দুটো অসামঞ্জস্যতা থাকলেও সেই ট্রান্সপ্ল্যান্টটা করা হয় এদের সংখ্যাই বেশি তবে এর খারাপ দিকও কিন্তু আছে এভাবে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করলে অনেক সময় রোগির শরীর সেটা গ্রহন করতে পারেনা

আনজাইয়ের ক্ষেত্রে ট্রান্সপ্ল্যান্টটা হয়েছিল পিতা কন্যার মধ্যে টিস্যু সামঞ্জস্যতাও বেশ ভালো ছিল তাই সবকিছু ভেবে সেটা সফল হবার কথা ছিল কিন্তু কেন জানি তারা ব্যর্থ হয়েছিল ইয়োশিজুমি আর তার টিম নিজেদেরকেই দোষ দিয়েছিল তারা ছোট্ট মেয়েটার বিশ্বাসটা ধরে রাখতে পারেনি

ইয়োশিজুমি জোরেসোরে শ্বাস টেনে নিল কম্পিউটারের পর্দায় মারিকোর নামটার দিকে তাকাতেই তার কিছু অপ্রিয় স্মৃতি মনে হওয়া শুরু করলো কাজে মনোযোগ দাও, তিনি নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন তারপর ফোনের অপরপাশে ধৈর্য নিয়ে বসে থাকা ওদাগিরিকে বললেন, “মারিকোর কোনো মিসম্যাচ নেই তাহলে

ঠিক ধরেছেনসে উত্তর দিলএই অঞ্চলে আর কারো সাথে এতটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি আশা করব সকল খুঁটিনাটিতে আপনি চোখ বুলিয়ে নেবেন

আসলেই ঠিক বলেছে ওদাগিরি এতগুলো মানুষের মধ্যে কেবল একটি মাত্র মিসম্যাচ আছে- এর সংখ্যাও শূন্য তবে পাচজন প্রার্থীকে দেখা যাচ্ছে, যাদের কেবল দুটো মিসম্যাচ হয়েছে ওদেরই একজন অপর কিডনিটা পেতে যাচ্ছে তার বয়স ৫১ বছর, বিগত পাঁচবছর ধরেই তার ডায়ালাইসিস চলছে আপাতত তাকে প্রতিবেশী এলাকার একটা কেয়ার ফ্যাসিলিটিতে রাখা হয়েছে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নারীর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি

কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্টের জন্য গোটা জাপানে প্রায় ২০,০০০ সংখ্যক মানুষ রেজিস্ট্রেশন করে রেখেছে এত সংখ্যক মানুষের মধ্যেও কেবল মাত্র ২০০ জন মানুষ প্রতি বছর তাদের স্বপ্নের ট্র্যান্সপ্ল্যান্টটা পেয়ে থাকে আর ডায়ালাইসিস রোগির সংখ্যা প্রায় ১২০,০০০ এর মতন যাদের ক্রনিক রেনাল ফেইলিয়র হয়ে থাকে, তারা ট্রান্সপ্ল্যান্টের সুযোগ পান না বললেই চলে ইউরোপ কিংবা আমেরিকার সাথে তুলনা করলে কিন্তু ডায়ালাইসিস এর রোগি আর ট্রান্সপ্ল্যান্টের অপারেশনের অনুপাত অনেক বেশিই মনে হবে আসলে সাধারন মানুষজন এই ব্রেনডেড হয়ে মৃত্যুটাকে ঠিক এখনো মেনে নিতে পারছেনা তাই তাদের কাছ থেকে নেয়া কিডনিটা তারা পারতপক্ষে নিতে চায়না রোগি আর চিকিৎসক উভয়েই এই রোগে দুষ্ট তাই নতুন কিডনি পাওয়ার জন্য অনেকে দীর্ঘসময়ের জন্য ডায়ালাইসিসটাকেই বেছে নেয় অথচ এই প্রক্রিয়াটা শরীর আর আর্থিক দুইক্ষেত্রেই প্রচুর চাপ ফেলে অথচ যারা কিডনিটা নেয়, তারা কিন্তু সুখী স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন কাটাতে সক্ষম হয়

আরেকটা কথা এক নাম্বারে যে বয়স্ক ভদ্রলোকের নাম রয়েছে, তিনি যদি কিডনিটা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন, তবে পাঁচ নম্বরে থাকা প্রার্থীকে টেস্ট করার জন্য ডাকা হবেওদাগিরি তাকে জানিয়ে দিলতার বয়স ৩৬, তিনবছর ধরে তিনি ডায়ালাইসিস চালাচ্ছেন

ঠিক আছে

তিনি প্রধান দুইজন প্রার্থীর চার্ট প্রিন্ট করিয়ে নিলেন যদি কোনো কারনে মারিকো অসুস্থ হয়ে পড়ে, তবে ৩৬ বছর বয়স্কা নারী তার জায়গা নিয়ে নেবে

ইয়োশিজুমি কো-অর্ডিনেটরের সাথে শিডিউল পাল্টাপাল্টি করে সকল আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা সেরে নিলেন তার প্রথম কাজ হচ্ছে কিডনি দুটা সংগ্রহ করা সেটা ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে গিয়ে তাকে সম্পন্ন করতে হবে তারপরে একটা কিডনি ওদাগিরির মাধ্যমে শিপিং করার ব্যবস্থা করবেন অন্যটা তিনি এই হাসপাতালে এনে সাথে সাথে ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু করে দেবেন ওদাগিরি সবকিছু ভেবে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করে রেখেছেন কিডনি উত্তোলন করা থেকে শুরু করে ট্রান্সপ্ল্যান্ট পর্যন্ত বেশ সংকটপূর্ন সময় কাটে সময়টা অনেক গুরুত্বপূর্ন ডোনারের হৃৎপিন্ড থেমে গেলেই ঘড়ির কাঁটা ধরে সবকিছু করে যেতে হবে সকলকে, মানে সার্জন, এসিস্ট্যান্ট, নার্সসকলকে ঠিকঠাক মত তাদের কাজে সাহায্য করাটাই তার দায়িত্ব

সকল আনুষ্ঠানিকতা সেরে ইয়োশিজুমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোনটা রেখে দিলেন

অবশেষে দেখা যাচ্ছে ইয়োশিজুমি তার ভুলটা সংশোধনের সুযোগ পেয়েছেন


মারিকো আনজাই যেভাবেই হোক আমি মেয়েটাকে বাঁচাবোই






.

সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর দেবার দুদিন পরেই কিয়োমির হৃৎপিন্ডের গত কমে যেতে শুরু করলো অবশ্য সেটা অবশ্যম্ভাবী ছিল তার শ্বাসপ্রশ্বাসে অবশ্য তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা দিল না তবে এখনো তাকে কিন্তু কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্রের মাধ্যমেই শ্বাস নিতে হচ্ছে নানান লক্ষন দেখে বোঝা যাচ্ছে শরীরের আয়ু কমে আসছে তার প্রাণশক্তি খুব দ্রুতগতিতে কমে যাচ্ছে

আমরা সিটি সেন্টাল হাসপাতাল থেকে ট্রান্সপ্ল্যান্ট টিমের ব্যবস্থা করেছি তারা এই বিকেলে এসে উপস্থিত হবেকিয়োমির ডাক্তার তোশিয়াকিকে জানালেনকিয়োমির হৃৎস্পন্দন থেমে গেলেই তারা কাজে নেমে পড়বে তাই আগে থেকেই তার ফিমোরাল ধমনীকে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে সেজন্য আজ রাতে তার ওপর আমরা ছোট্ট একটা অপারেশন করব হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে ধমনীটাতে একটা ক্যানুলা প্রবেশ করানো হবে ক্যানুলাটা কিডনি দুটোকে ঠান্ডা রাখবে

সে কাজটাও খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়ে গেল তোশিয়াকি যখন আইসিইউতে ফিরল, সে দেখতে পেল কিয়োমির ঊরুতে ক্যানুলা প্রবেশ করানোর জন্য দাগ দেয়া হয়েছে তাকে ওষুধ দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রক্তের চাপ কিন্তু এখনো স্থিরই আছে, ১০০ এর ওপর কাঁটা ঘোরাফেরা করছে ডাক্তার তাদের ব্যাখ্যা দিলেন, তাদেরকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিয়োমির শরীরের উষ্ণতাটাও ঠিক ঐটুক সময় পর্যন্তই থাকবে, ঘোলা দৃষ্টিতে তাকিয়ে তোশিয়াকি ভাবলো প্রতিটা মুহূর্ত পার হওয়ার সাথে সাথে কিয়োমির শরীরটাও ডোনেশন দেবার বস্তুতে পরিণত হচ্ছে এই কঠিন বাস্তবতাটা মেনে নিতে না পেরে সে সারারাত তার স্ত্রীর পাশে বসে রইল

দশটা বাজে অন্যান্য সময়ের মতই নার্স এলো সে কিয়োমির বেড প্যান খালি করে নিল, নাকটা পরিষ্কার করে দিল মুখের ভেতরটা পরিষ্কার করে একটা টাওয়েল দিয়ে গলাটা মুছে দিল তারপর কিয়োমির শরীরের অবস্থানটা পাল্টে দিল

এতগুলো কাজ করার পরেও তার মুখে কোনরূপ বিরক্তির ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছিল না বরং কাজ করতে করতে সে কয়েকবার তোশিয়াকির দিকে তাকিয়ে সহানুভূতির হাসি হাসলো

তোশিয়াকির কখনই কোনো বড়সড় অসুখের পাল্লায় পড়েনি। তবে ক্যারিয়ারের জন্য তাকে অনেক ডাক্তারের সাথে কথাবার্তা বলতে হয়েছে। তবে আজ সে উপলব্ধি করতে পারলো, ডাক্তারির বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। ডাক্তার আর নার্সদের যে রোগির জন্য এতকিছু করতে হয়, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না।

“আপনাদের প্রতি আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ,” তোশিয়াকি মাথা নুইয়ে নার্সটাকে বললো। “আমি নিশ্চিত কিয়োমি জেগে থাকলে সেও একই কথাই বলতো।”

নার্স কাজ করা থামিয়ে হাসলেন। “শুনে ভাল লাগলো। তবে ওঁর জন্য আর কিছু করতে পারলাম না দেখে আমাদের খুব খারাপ লাগছে।” 

“সমস্যা নেই।” মুখ থেকে রক্ত সরে গেল তোশিয়াকির। “আপনাদের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, সবই করেছেন আপনারা। আপনাদের প্রত্যেকেই সর্বোচ্চটা দিয়েছেন।”

নার্সের মুখ থেকে আস্তে আস্তে হাসিটা মুছে গেল। তিনি তোশিয়াকির দিক থেকে মুখটা সরিয়ে আবার কাজ শুরু করলেন।

“আইসিইউ’তে কাজ করতে করতে মাঝেমধ্যে নানান চিন্তাভাবনা মাথায় আসে।” তিনি শান্ত গলায় যেন নিজেকেই শোনাতে লাগলেন,”এই যে, আমরা প্রত্যেকটা রোগির জন্য সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করি, তারপরেও প্রত্যেকদিন রোগিরা মারা যায়। অন্য ডিপার্টমেন্টের তুলনায় আইসিইউ এর নার্সদের চাকরি ছেড়ে দেয়ার হার অনেক বেশি। তারপরেও…” হাতের কাজ শেষ হওয়ায় তিনি থেমে গেলেন। কিয়োমির জামাকাপড় সব ঠিকঠাক করে পরিয়ে তোশিয়াকের দিকে তাকালেন।

“তারপরেও যখন মানুষ এভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তখন কাজটা চালিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা পাই।” বলে তিনি আইসিইউ থেকে বের হয়ে গেলেন।    
 
        

No comments:

Post a Comment

আরো যা দেখতে পারেন